আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুদিন আগে বিদেশে পালিয়ে গেছেন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ মাহাবুবুল ইসলাম। দীর্ঘ আট মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও তার বিরুদ্ধে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কারা অধিদফতর। এর মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হলেও তার জবাব দেননি।
শোকজ নোটিশে উল্লেখ করা হয়, আপনি জেলার মোহাম্মদ মাহাবুবুল ইসলাম কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত থাকা অবস্থায় গত ৩ আগস্ট রাত ১১টা ১৭ মিনিটে তখনকার সিনিয়র জেল সুপারকে ফোন করে জানান, জরুরি পারিবারিক সমস্যার কারণে মধ্যরাতে কর্মস্থল ত্যাগ করবেন এবং পরদিন সকালে কাজে যোগ দেবেন। যা ইতিমধ্যে কারা অধিদফতরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু আপনি ২৯ আগস্ট পর্যন্ত কর্মস্থলে যোগদান করেননি। সিনিয়র জেল সুপার আপনার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে পারেননি। কারাগারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা শৃঙ্খলার পরিপন্থি এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যে চরম অবহেলার শামিল। এ অবস্থায় ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদান করার জন্য আপনাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুমিল্লা কারাগারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার পতনের পর গত ২৯ আগস্ট অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে কারা মহাপরিদর্শক শেখ সুজাউর রহমান জেলার মোহাম্মদ মাহাবুবুল ইসলামকে কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়ে শোকজ করেন। তবে আজ পর্যন্ত শোকজের জবাব দেননি মাহাবুবুল।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১২ মে কুমিল্লা কারাগারের জেলার হিসেবে যোগ দেন মাহাবুবুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে বুঝতে পেরে ৩ আগস্ট রাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে তুরস্কে পালিয়ে গেছেন। পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে কারাগারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক করা হয়। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলায়। আট মাস পার হয়ে গেলেও কর্মস্থলে যোগ দেননি। এমনকি এখনও তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কারা অধিদফতর।
মাহাবুবুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক-এগারোর সময় শেখ হাসিনা কারাগারে গেলে তার সঙ্গে পরিচয় হয় মাহাবুবুল ইসলামের। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তখন শেখ হাসিনাকে কারাগারে সেবা দেওয়ার সুযোগ হয়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গেলে পদোন্নতি পান। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে জেলার হিসেবে বিভিন্ন কারাগারে যোগ দেন। এই সময়ে নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, কারাগারের টেন্ডার বাণিজ্যসহ কারা সংশ্লিষ্ট সব বাণিজ্য করেছেন। এমনকি এসপি ও ডিসির বদলিও করিয়েছেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পেতেন বলে অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাকে ভয় পেতেন। দুর্নীতি করে নারায়ণগঞ্জে গড়ে তুলেছেন ডুপ্লেক্স বাসভবন ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আভাস পেয়েই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তুরস্কে চলে যান মাহাবুবুল।
কুমিল্লা কারাগারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত কয়েক মাস আমরা তার পরিবারের বিভিন্ন জনের মোবাইল নম্বরগুলোতে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কোনোভাবেই তার এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে তার পরিচিত কয়েকজন বলেছেন পরিবার নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন কারাগারে প্রভাব বিস্তার ও দুর্নীতি করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে। এজন্য হয়তো ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে মোহাম্মদ মাহাবুবুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিক দিন কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ দিয়েও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা কারাগারের জেলার মো. আব্দুল্ল্যাহেল আল-আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কারা কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম আট মাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে বারবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু জবাব দেননি। তার অনুপস্থিতির কথা কারা অধিদফতরকে জানিয়েছি। এখন তারা ব্যবস্থা নেবেন।’