লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে মো. সাইজুদ্দিন দেওয়ান (৪০) নামের এক প্রবাসী নিহত হয়েছেন। এ সময় আরও ২০ জন আহত হয়েছেন। সোমবার (০৭ এপ্রিল) বিকালে উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের মধ্যচর বংশী বেড়িবাঁধ, বাবুরহাট ও খাসেরহাটে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত সাইজুদ্দিন চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট এলাকার দেওয়ান বাড়ির নূর দেওয়ানের ছেলে ও স্পেনপ্রবাসী। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। সাইজুদ্দিন বংশী বেড়িবাঁধ এলাকায় সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ফারুক কবিরাজ ও উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব শামীম গাজী গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সাইজুদ্দিন শামীম গাজী গ্রুপের অনুসারী ছিলেন।
স্থানীয় ও দলীয় সূত্র জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফারুক কবিরাজ এবং অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা কৃষক দলের সাবেক সদস্যসচিব শামীম গাজী।
সোমবার বিকালে দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা খাসেরহাট ও বাবুরহাটে সংঘর্ষে জড়ান। সংঘর্ষ চলাকালে আটটি বসতবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ১০ জনকে রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাঁচ জনকে নোয়াখালী হাসপাতাল, তিন জনকে ঢাকায় এবং দুজনকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়া সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাইজুদ্দিন মারা যান। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরূপ পাল বলেন, ‘সাইজুদ্দিনের পায়ে ও শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে।’
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চরবংশী ইউনিয়নে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। একজন নিহত হয়েছেন, অনেকে আহত হন।’
এর আগে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর বিএনপির এই দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। তখনও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছিলেন। এ ঘটনার পর উপজেলা বিএনপি উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের সব কমিটি বিলুপ্ত করেছিল। পরে জরুরি বৈঠক ডেকে তদন্ত কমিটিও গঠন করে। ওই কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম মিঠু ও সদস্য শফিকুর রহমান ভূঁইয়া।
উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব শামীম গাজী বলেন, ‘ফারুক কবিরাজের নির্দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলায় ফারুক কবিরাজের লোকজন জড়িত।’
তবে ফারুক কবিরাজ বলেন, ‘শামীম গাজীর নেতৃত্বে এলাকায় দখল ও চাঁদাবাজি চলছে। আমার অনুসারীরা তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষ হয়। শামীমের লোকজন দফায় দফায় অস্ত্র নিয়ে বাজারে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছে। ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। আজকের সংঘর্ষে একজন নিহত ও অনেকে আহত হন।’
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ সালাহ আহমেদ জানান, ঘটনাটি দুঃখজনক। দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’