মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীকে বান্দরবান আদালতে তোলার পর কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে এক মামলার শুনানির জন্য প্রথমে আরসা-প্রধানকে বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত তোলা হয়। পরে আরেক মামলার শুনানির জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। শুনানি শেষে দুই আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ সময় আদালত চত্বরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল পুলিশ।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে আরসা-প্রধানকে কারাগারে নেওয়ার সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা আরাকানের জমিন পাবে। আমরাই পাবো ওই জমিন ইনশাআল্লাহ। আরাকানের জমিন আমাদের। আমাদের নিজ দেশে ফেরাতে সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেজন্য শুকরিয়া জানাচ্ছি।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে বান্দরবানের আদালতে হাজির করা হয়েছে আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীকে। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী হত্যা মামলার আসামি তিনি। এ ছাড়া অস্ত্র আইনেও তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এই দুই মামলায় তাকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং চিফ জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করা হয়। উভয় আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘গত ১৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আরসার নয় সদস্যসহ গ্রেফতার হন আতাউল্লাহ। সেখানে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইন ও বিদেশি আইনে মামলা করা হয়েছিল। এ ছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর মাদকবিরোধী অভিযানে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা রিজওয়ান রুশদী হত্যা ও অস্ত্র আইনের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।’
বেলা সাড়ে ১১টায় প্রথমে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ডিজিএফআই কর্মকর্তা রিজওয়ান রুশদী হত্যা মামলায় তাকে হাজির করা হয়। একই মামলায় আগে গ্রেফতার আরও নয় জনকেও হাজির করা হয়েছিল। আগের গ্রেফতার নয় জনের সঙ্গে আতাউল্লাহকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
এরপর অস্ত্র আইনে করা মামলায় আতাউল্লাহকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়। এই আদালতও শুনানি শেষে আতাউল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ রেজাউল করিম মজুমদার জানিয়েছেন, স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এজন্য ওই মামলায় আতাউল্লাহকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়েছিল। অস্ত্র মামলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। উভয় আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রিজওয়ান রুশদী হত্যার ঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর ডিজিএফআই কক্সবাজার কার্যালয়ের মাঠ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় বলা হয়েছে, ১৪ নভেম্বর ঘুমধুমে অভিযান পরিচালনার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আরসার প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে গুলি চালানো হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ৪৫ মিনিট গোলাগুলি হয়। আরসার গুলিতে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী নিহত ও নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য আহত হন।
পুলিশ জানায়, আতাউল্লাহ দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। গত নভেম্বরে সিদ্ধিরগঞ্জের আবাসিক এলাকায় ১০ তলা একটি ভবনে মাছ ব্যবসায়ী পরিচয়ে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে আরও ১০ সদস্যসহ তাকে গত ১৭ মার্চ গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার কাছ থেকে ২১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল।