নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ঘাটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয়দের ডাকা মানববন্ধনে বিএনপি নেতার নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত তিন জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চেয়ারম্যান ঘাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- হাতিয়া উপজেলার হরণী ইউনিয়নের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম, মো. জাফর আহমেদ ও মো. হাশেম।
চেয়ারম্যান ঘাটের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাতিয়া নদীভাঙন কবলিত এলাকা। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়ছে। অবৈধ বালু ব্যবসার পেছনে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বিএনপির নেতারা। অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলন বন্ধে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মানববন্ধন করে স্থানীয়রা। এ সময় বালু ব্যবসায়ী বিএনপি নেতা আব্দুল মতিন ও ইব্রাহিম সরদারের নেতৃত্বে হামলা হলে তিন জন আহত হন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আক্তারুজ্জামান দোলনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
উপজেলার হরণী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. হাশেম বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করছিলাম। এ সময় বালু ব্যবসায়ী বিএনপি নেতা আব্দুল মতিন তার সহযোগী শাকিল, রবিউল, আনোয়ার, এনায়েত ও ইব্রাহিম সরদারসহ ৪০-৫০ জন হামলা চালান। তারা আমাদের মানববন্ধনের ব্যানার নিয়ে যান।’
আহত জাফর আহমেদ বলেন, ‘আমরা নদীতে মাছ ধরি। কিন্তু বালুবাহী বাল্কহেডের কারণে আমাদের জাল ছিঁড়ে যায়। আমরা প্রতিবাদ করলে মারতে আসে। অবৈধ বালুর ব্যবসার ফলে নদী ভেঙে যাচ্ছে। তারা নদীর পাড়ের মাটিও কেটে বিক্রি করে দেয়। আমাদের দাবি, দ্রুত এই অবৈধ বালু ও মাটি ব্যবসা বন্ধ করা হোক।’
চেয়ারম্যান ঘাট বাজারের ব্যবসায়ী মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি নেতারা বালুর ব্যবসা শুরু করেন। ফলে বাজারের পরিবেশ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দোকানপাট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর।’
হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে বালু ব্যবসায়ী ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আব্দুল মতিন ও ইব্রাহিম সরদারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। ফলে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
হরণী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আক্তারুজ্জামান দোলন বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে এসে পরিবেশ শান্ত করেছি। যারা হামলা করেছে, তারা হামলাকারী। এখানে রাজনৈতিক পরিচয় বড় বিষয় নয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। বিষয়টি মীমাংসার জন্য বুধবার বেলা ১১টায় উভয় পক্ষের চার জন করে ডাকা হয়েছে। জনজীবন অতিষ্ঠ হোক, এমন কিছু আমরা চাই না।’
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী শামীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ দিনব্যাপী উপজেলা সহকারী কমিশনানের (ভূমি) নেতৃত্বে বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জনস্বার্থে এমন অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।’