ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন জিনাত রিজওয়ানা নামে এক যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নারী। এ নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে পৃথক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে পৃথক লিখিত অভিযোগ দেন জিনাত রিজওয়ানা। তার দাবি, হবিগঞ্জের ৭৫০ শতাংশ জমি দখল করে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও তার ভাই জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ২০২২ সাল থেকে তাকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন।
জিনাত রিজওয়ানার অভিযোগ, ঢাকার উত্তরা এবং সিলেটে তার একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ রয়েছে। ঢাকার উত্তরা এলাকার তিনি অন্যতম শীর্ষ করদাতা। যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও ব্যবসায়িক কাজে নিয়মিত দেশে আসা যাওয়া করেন। বিদেশে থাকায় একাধিক চক্র তার ব্যবসা ও সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করেছে বিভিন্ন সময়। না পেরে একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। এর মধ্যে ২০২২ সালের ৫ জুন উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাজানো মামলা করা হয়। ৬ জুন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসার পর ২৫ জুন ব্যক্তিগত কাজে ভারতে যান এবং ২৮ জুন দেশে ফিরলে বিমানবন্দর থেকে ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। একদিন থানা হাজতে রেখে নির্যাতনের পর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানা হয়।
তার দাবি, পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় তার ছবি তুলে সেই ছবি ব্যবহার করে জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী পোস্টার ছাপিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লাগিয়ে অপপ্রচার করেন। হবিগঞ্জ এলাকার ৭৫০ শতাংশ জমি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে হয়রানি করা হয় বলেও দাবি করেন রিজওয়ানা।
এদিকে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের ঘটনায় নাসিমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। রবিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) ফেনীর পরশুরামের আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তি এ আবেদন জমা দেন।
দুদকে দেওয়া আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ছিলেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার। নাসিমের বাড়ি সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরাম পৌরসভার গুথুমা গ্রামে। যার তিন পাশে সীমান্ত। তার নেতৃত্বে এই সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরা থেকে অবৈধভাবে মাদক, ফেনসিডিল, গরু ও শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক আসে বাংলাদেশে। দেশ থেকে পাচার হয় স্বর্ণ। ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার পদবি ব্যবহার করে প্রশাসনে বদলি, পদায়ন থেকে শুরু করে বিনা টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেওয়া, বিদ্যুৎ কোম্পানির লাইসেন্স দেওয়ার কাজ শুরু করেন নাসিম। ফেনীকে বানিয়েছিলেন অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। বালুমহাল, টেন্ডার বাণিজ্য, সালিশি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য ও সীমান্ত থেকে চোরাকারবার চলতো তার নির্দেশে। তাকে ২০ শতাংশ কমিশন না দিলে কোনও টেন্ডারই পেতেন না ব্যবসায়ীরা। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই বুঝে নিতেন কমিশন। বিভিন্ন সময় দুর্নীতির কারণে অনেকে ধরা পড়লেও সব সময় অন্তরালে থেকে গেছেন নাসিম। গত সাড়ে ১৫ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এই খাত থেকে বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন।