২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ। প্রাথমিকভাবে সড়কটির মোহরা রাস্তার মাথা থেকে রাউজান গশ্চি ধরের টেক পর্যন্ত দুটি প্যাকেজে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা হবে। এতে খরচ হবে ৫০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। সড়কের বাকি কাজ পর্যায়ক্রমে করা হবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, মোহরা রাস্তার মাথা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৫২ কিলোমিটার। এটি চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক সড়ক। এটি দিয়ে চট্টগ্রাম নগরের সঙ্গে হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, কাপ্তাই, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির সঙ্গে যাতায়াত রয়েছে। ফলে সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। বিভিন্ন সময়ে সংস্কার করা হলেও হয়নি প্রশস্তকরণ।
চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক প্রশস্তকরণের দাবি দীর্ঘদিনের। সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কাছাকাছি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জিয়ানগর এলাকায় বাসের ধাক্কায় নিহত হন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের দুই শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও তৌফিক হোসাইন। আহত হন আরেক শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে টানা চার দিন আন্দোলন করেন চুয়েটের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক প্রশস্ত করে চার লেনে উন্নীতকরণ, সড়ক বিভাজক স্থাপন, সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে দাবি মানার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার শর্তে আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সড়কটি প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেয় সওজ।
চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাপ্তাই সড়ক দিয়ে যে হারে যানবাহন চলাচল করে, সে অনুযায়ী এটি অনেক সরু। প্রশস্তকরণের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। যেহেতু কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, আশা করছি ভবিষ্যতে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। পাশাপাশি কমবে যানজটও।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দীন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ জানুয়ারি মাসে শুরু হবে। কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে হাটহাজারীর মদুনাঘাট হয়ে রাউজান নোয়াপাড়া গশ্চি ধরের টেক পর্যন্ত সড়কটির সাড়ে ১৩ কিলোমিটার প্রশস্তকরণের কাজ দুটি প্যাকেজে হবে। এটির উভয় পাশে ৫ ফুট করে ১০ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে। ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দুটি প্যাকেজের মধ্যে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার একটি প্যাকেজে ব্যয় হবে ২২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। মদুনাঘাট থেকে গশ্চি ধরের টেক পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণে ব্যয় হবে ২৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।’
জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সওজের চট্টগ্রামের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নিজাম উদ্দীন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে হাটহাজারী মদুনাঘাট পর্যন্ত একটি প্যাকেজে পাঁচ কিলোমিটার সড়কের উভয় পাশে ৫ ফুট করে ১০ ফুট প্রশস্ত করা হবে। এখানে নজুমিয়াহাট এলাকায় ২০০ মিটার ২০ ফুটের বিদ্যমান সড়কের উভয় পাশে আরও ১৫ ফুট প্রশস্ত করা হবে। যাতে এই এলাকায় যানজট না হয়। অপর প্যাকেজে মদুনাঘাট থেকে রাউজান গশ্চি ধরের টেক পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার সড়কের উভয় পাশে ৫ ফুট করে ১০ ফুট প্রশস্ত করা হবে। এখানে নোয়াপাড়া এলাকায় যানজট নিরসনে ২০০ মিটার সড়কের উভয় পাশে ব্যারিয়ার দেওয়া হবে। সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে কাজ শুরু হবে।’
এ বিষয়ে সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু মো. ভুট্টু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মোহরা রাস্তার মাথা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫২ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে মোহরা কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে রাউজান উপজেলার গশ্চি ধরের টেক পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার বড় হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বাকি অংশ হবে।’
তিনি বলেন, ‘কাপ্তাইমুখী সড়কের ডান অংশে ১০৫ ফুট এবং বাঁ অংশে ৭৫ ফুট করে জমি অধিগ্রহণ করা আছে। ফলে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। সড়কের উভয় পাশে কয়েক হাজার অবৈধ দখলদার আছে। সড়কের জমি দখল করে দোকানপাটসহ বসতঘর নির্মাণ করেছে তারা। এসব অবৈধ দখলদারের তালিকা করা হচ্ছে। শিগগিরই দখলদারদের নোটিশ দেওয়া হবে। এরপর উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।’