কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ও ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দোয়েল চত্বরের সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা।
‘চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ’ ব্যানারে কর্মসূচিতে অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। এ সময় তারা ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা কানুর ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কুমিল্লা জেলা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শৈলপতী নন্দন চৌধুরী, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাবেক কমান্ডার প্রমোদ রঞ্জন চক্রবর্তী, মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম, আব্দুল বারিক, শাসছুল হক, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল হালিম চৌধুরী নিজাম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড পৌরসভার সাবেক কমান্ডার কাজী জামাল উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড বাতিসা ইউনিয়নের সাবেক কমান্ডার নিজামুল হক মজুমদার, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আমির হোসেন মজুমদার, উজিরপুর ইউনিয়নের সাবেক কমান্ডার জমির উদ্দিন, কালিকাপুর ইউনিয়নের সাবেক কমান্ডার ফারুক, বাতিসা ইউনিয়নের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিস ভূঁইয়া, আলকরা ইউনিয়নের সাবেক কমান্ডার পেয়ার আহমেদ ও উপজেলা শুভপুর ইউনিয়নের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার গাজী নূর হোসেন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা শৈলপতী নন্দন চৌধুরী বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে, যারা স্বাধীন, সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে, তারা কখনও এমন কাজ করতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করি, যারা এই হামলা করেছে, তারাই হলো স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। অবিলম্বে হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরানো মানে সব মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পরানো। আবদুল হাই কানু একজন প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার এই অসম্মান, পুরো জাতির জন্য অসম্মান। হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানাই।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সাবেক কমান্ডার প্রমোদ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা রক্ত দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান মানে জাতীয় পতাকার অপমান। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সম্পদ। কানু ভাইয়ের ওপর যে হামলা হয়েছে, এজন্য রাষ্ট্র দায়ী হবে। আমরা দেশের সর্বোচ্চ আইনে জড়িতদের শাস্তি চাই। যারাই জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। আমরা ধন্যবাদ জানাই তাদের যারা গতকাল থেকে এই বিষয়টি নিয়ে রাজপথে মিছিল ও প্রতিবাদ করেছেন। এ ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় সরকারকেও ধন্যবাদ জানাই।’
এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত থেকে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল পর্যন্ত চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে জুতার মালা পরানোর পর মুক্তিযোদ্ধাকে টানাহেঁচড়া করা প্রধান দুই অভিযুক্ত (বহিষ্কৃত জামায়াত সমর্থক) এখনও আটক হয়নি।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিং করে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আক্তার উজ জামান আটকের বিষয়টি জানান। এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। তবে মামলা করার জন্য এজাহার নিয়ে আসার সময় দুর্বৃত্তরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে বলে ওই মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করেছেন।
গত রবিবার দুপুরে চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে (৭৮) জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে রাতে এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।