চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে এমভি আল-বাখেরা নামের সার বহনকারী একটি জাহাজ থেকে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় পাঁচ জনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় আরও তিন জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যান। বেঁচে থাকা জুয়েল নামে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাঈদ আহমেদ।
বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘এমভি আল-বাখেরা জাহাজটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর কাফকো জেটি থেকে ইউরিয়া সার বোঝাই করে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী যাচ্ছিল। জাহাজটিতে ৮ জন স্টাফ ছিলেন। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত জাহাজের স্টাফদের সঙ্গে মালিকদের ফোনে কথা হয়। তবে রাত থেকে তাদের আর ফোনে পাওয়া যায়নি। চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করার কথা ছিল। এক মালিকের আরেকটি জাহাজ (এমভি মুগনি-৩) একই পথে আসার কথা। এ কারণে ওই জাহাজের স্টাফদের খোঁজ নিতে বলা হয়। ওই জাহাজ এমভি আল-বাখেরা নোঙর করা অবস্থায় দেখতে পেয়ে কাছাকাছি যায়। তারা আল-বাখেরার কাছাকাছি যাওয়ার পরই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে পাঁচ জনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বাকি তিন জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জেনেছি জাহাজ থেকে তেল চুরি হয়েছে। তবে সার অক্ষত আছে। নিহত এবং আহতদের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের তদন্তপূর্বক খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি সংগঠনের পক্ষ থেকে।’
এমভি আল-বাখেরা জাহাজের মালিক দিপলু রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাহাজে মাস্টারসহ মোট ৮ জন স্টাফ ছিলেন। জাহাজে মাস্টার (চালক) ছিলেন কিবরিয়া। তার সঙ্গে আমার রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত কথা হয়েছিল। সে বলেছিল বহরে আরও জাহাজ আছে। সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে জাহাজ নোঙর করা হবে। রাতে তাদের ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে আমাদের আরেক জাহাজ এমভি মুগনি-৩-এর মাধ্যমে এমভি আল-বাখেরা জাহাজের খোঁজ পাওয়া যায়। জাহাজে থাকা ৮ জন স্টাফের মাধ্যমে সাত জন মারা গেছেন। বেঁচে থাকা জুয়েলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে ঢাকায়।’
লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল সূত্র জানিয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর এমভি আল-বাখেরা নামের জাহাজটি ইউরিয়া সার পরিবহনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। জাহাজটির ধারণক্ষমতা ৮০০ মেট্রিক টন। জাহাজটির পণ্য পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স হামিদিয়া এন্টারপ্রাইজ। বরাদ্দ পাওয়ার পর জাহাজটিতে ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর কাফকো জেটি থেকে ৭২০ টন ইউরিয়া সার বোঝাই করা হয়। রবিবার ভোরে জাহাজটি সার নিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীর উদ্দেশে রওনা হয়। এই সার ছিল বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি)।
এদিকে, চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করে রাখা এমভি আল-বাখেরা জাহাজে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাত জনের মধ্যে ছয় জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় একই কোম্পানির অপর জাহাজের (মুগনি-৩) নাবিকরা এই ছয় জনের পরিচয় জানিয়েছেন। তবে নিহতদের পরিচয়ের বিষয়ে এখনও জেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি।
সহকর্মীদের দেওয়া তথ্যমতে, নিহতরা হলেন জাহাজটির চালক (মাস্টার) কিবরিয়া, ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল মুন্সি, গ্রিজার সজিবুল, আজিজুল ও মাজেদুল ইসলাম। নিহত আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি। আহত ব্যক্তির নাম জুয়েল। তাদের সবার বাড়ি নড়াইলে।
আরও পড়ুন:
চাঁদপুরে জাহাজে মিললো ৫ জনের লাশ, আহত অবস্থায় উদ্ধার ৩