এস আলম নিয়ন্ত্রিত চার ব্যাংকসহ পাঁচটি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) রেখে বেকায়দায় পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। লাভের আশায় এসব ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। এখন লাভতো দূরে থাক মূল টাকাটাও ফেরত পেতে একাধিক বার চিঠি দিয়েও আদায় করা যাচ্ছে না। এমনকি এসব টাকা উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকেও চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ পাঁচটি ব্যাংকে বন্দরের জমা রয়েছে এক হাজার ১০৬ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকগুলোর লুটপাট দৃশ্যমান হয়েছে। অনেক ব্যাংক ভুগছে তারল্য সংকটে। যে কারণে ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকের আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব টাকা আদায়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, এস আলম নিয়ন্ত্রণাধীন চারটিসহ মোট পাঁচটি ব্যাংকে চট্টগ্রাম বন্দরের স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা এক হাজার ১০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে এস আলম নিয়ন্ত্রিত চারটি ব্যাংকের ২১টি শাখায় চট্টগ্রাম বন্দরের স্থায়ী আমানত আছে ৯২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের চারটি শাখায় ২১২ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চারটি শাখায় ১৯০ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের দুটি শাখায় ১১৫ কোটি ও ইউনিয়ন ব্যাংকের ১১টি শাখায় ৪১১ কোটি টাকা রয়েছে। এ ছাড়াও পদ্মা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ২২টি এফডিআরের মাধ্যমে ১৭৯ কোটি টাকা আমানত রেখেছে বন্দর। ব্যাংকগুলোতে জমানো টাকা ফেরত পেতে বার বার তাগাদা দেওয়া হলেও মিলছে না সাড়া।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকে জরুরি পত্র দিয়ে পদ্মা ব্যাংকে (সাবেক ফার্মার্স ব্যাংক) বিনিয়োগ করা ১৭৯ কোটি টাকা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছে। এ ব্যাংকে রাখা আমানতের বিপরীতে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কোনও প্রকার মুনাফা দিচ্ছে না পদ্মা ব্যাংক। এ ব্যাংক গচ্ছিত টাকার বিপরীতে মুনাফা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার পর এফডিআর ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। ছয়টি এফডিআরের বিপরীতে ৯৫ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে চিঠি দিলে তারা কোনও সাড়া দেয়নি। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব টাকা আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেশ কয়েকটি ব্যাংকে আমাদের স্থায়ী আমানত হিসেবে টাকা গচ্ছিত আছে। তবে কিছু ব্যাংক এফডিআরের বিপরীতে কোনও মুনাফা দিচ্ছে না। এমনকি এফডিআরের টাকাও ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা এসব ব্যাংকে চিঠি দিয়েছি। ব্যাংকগুলো আমাদের চিঠির কোনও সাড়া দিচ্ছে না। এফডিআরের টাকা যেকোনও সময় উত্তোলন আমাদের অধিকার। এসব ব্যাংক সেই অধিকার খর্ব করেছে। পদ্মা ব্যাংকে আটকে পড়া ১৭৯ কোটি টাকা উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, দরপত্র দাখিলের সময় টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে জামানত হিসেবে পে-অর্ডার নেওয়া হয়। আবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়া হয়। এ ছাড়াও এফডিআরের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের তহবিল বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে রাখা হয়। মূলত জাহাজ ভেড়ানো, পণ্য ওঠানামা, ইয়ার্ড ভাড়া ও নিজস্ব জমির ভাড়াসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ তহবিল থেকেই বন্দরের চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি, জনবল ও পরিচালন ব্যয়ও নির্বাহ করা হয়।
এদিকে, ৯টি ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেবার বিপরীতে মাসুল বা চার্জ হিসেবে এসব ব্যাংকের চেক, পে-অর্ডার ও ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণ করবে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থ ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শাকুর স্বাক্ষরিত এক আদেশের মাধ্যমে বন্দরের অভ্যন্তরীণ বিভাগগুলোতে এ বিষয়ে লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরীণ বিভাগগুলোর কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপনার বিভাগের সব কার্যক্রমে নিম্নোক্ত ব্যাংকসমূহ থেকে ইস্যু করা সব প্রকার পে-অর্ডার, চেক, ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।