চান্দেরবাগ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত একটি গ্রাম। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী ডাকাতিয়া নদী তীরের এই গ্রামে মাত্র কয়েকটি মুসলিম পরিবারের বসবাস। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় ঢলে ডাকাতিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পুরো গ্রামটি তলিয়ে যায়। আশপাশে আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পার্শ্ববর্তী পিপড্ডা গ্রামের মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন। শুক্রবার (২৪ আগস্ট) সারাদিন থাকার পর শনিবার তারা আশপাশের স্বজনদের বাড়িতে গেছেন।
জানা গেছে, চান্দেরবাগ গ্রামের বাসিন্দারা অনেকটা অবহেলিত। তাদের অধিকাংশই মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় পানিতে ডাকাতিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গ্রামটি ডুবে যায়। গ্রামের অনেক বাসিন্দা আশপাশে কোনও আশ্রয়কেন্দ্র না পেয়ে পাশের গ্রামের মসজিদে অবস্থান করেন। বাকিরা প্রতিবেশী মুসলমানদের বিভিন্ন বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়ে জীবন রক্ষা করেছেন। পেয়েছেন খাবারও।
ওই গ্রামের বাসিন্দা গীতা রাণী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডাকাতিয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়, আবার কমে যায়। রাস্তা সমান পানি হয়। কিন্তু কখনও বাড়িঘরে পানি উঠেনি। এবার পুরো গ্রাম ডুবে গেছে আমাদের। কোনোরকম জীবন নিয়ে মসজিদে গিয়ে অবস্থান নিয়েছি সবাই। কেউ কোনো ধরনের বাধা দেয়নি। আশপাশের মানুষজন শুকনো খাবার দিয়েছেন। শনিবার অনেকে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
তিনি আরও বলেন, আগ থেকে আমাদের গ্রামটি অবহেলিত। রাস্তাঘাট ভালো নেই। ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। সব পানিতে ডুবে গেছে। এই বিপদের সময় হিন্দু-মুসলিম সবাই ভেদাভেদ ভুলে গেছি।
পিপড্ডা গ্রামের বাসিন্দা নজির আহমদ বলেন, বন্যা হলেই সবার আগে আমাদের গ্রাম ও চান্দেরবাগ পানিতে ডুবে যায়। এবারের মতো বন্যা আমার জীবনে দেখিনি। পানিতে সব কিছু তলিয়ে গেছে। আমাদের কিছুই নেই। আশপাশে আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে চান্দেরবাগ গ্রামের কয়েকটি হিন্দু পরিবারকে মসজিদে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকি বলেন, চান্দেরবাগ গ্রামের মানুষের সমস্যার বিষয়ে শুনেছি। তাদের জন্য সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের শনিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে সব ধরনের ব্যবস্থা আছে।