রাঙামাটিতে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে তাদের। তবে জেলা প্রশাসনের এই সতর্কবার্তা আমলে নিচ্ছেন না অনেকে। মঙ্গলবার সকাল থেকে একটানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি ভয় ধরাতে পারেনি পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। কয়েক দফা মাইকিং করা হলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহা তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে দুপুরে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেত বলা হলেও উদাসীন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীরা। বিকালে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থান অথবা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আসমাসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। তারা শহরর লোকনাথ মন্দির এলাকা, রূপনগর ও শিমুলতলীর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনুরোধ জানান। এরপরও আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি এসব এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা।
কেন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহা জানতে চাইলে রূপনগরের বাসিন্দা রাবেয়া আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। তবে সন্ধ্যার পর ভারী বৃষ্টি নামলে ভয় লাগে। আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারি না। আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছে করে না। সেখানেও নানা সমস্যা। তবে পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে যাবো।’
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. রফিক মিয়া বলেন, ‘বর্ষা আসলেই আমাদের জন্য জেলা প্রশাসন অনেক কিছু করবে বলে জানায়। এরপর আর কোনও খবর থাকে না। আমাদের বসবাসের জন্য নিরাপদ জায়গা দেয় না। আমরা এখানে থাকতে চাই না। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে থাকছি। যাওয়ার কোনও জায়গা নেই।’
তবে যেভাবেই হোক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে বলে জানালেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টানা বর্ষণে পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিটি থানায় কুইক রেন্সপন্স টিম রাখা রয়েছে। আমরা চাই, একজন মানুষের যেন কোনও ক্ষতি না হয়। সে ব্যবস্থা রেখেই কাজ করছি। আমরা কারও জীবনের সঙ্গে আপস করবো না। যখন বুঝবো ঝুঁকি তখনই তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসবো। যেভাবে হোক আনা হবে।’
সর্বোচ্চ অনুরোধ করা হয়েছে তাদের, এরপরও তারা সতর্কবার্তা না শুনলে প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে বাধ্য করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, আরও কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হতে পারে। এভাবে টানা বৃষ্টি হলে পাহাড়ধস হতে পারে। পাহাড়ধসের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পরিবারগুলো ওখানে বসবাস করছে। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে সেখানের বাসিন্দাদের সরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনুরোধ করছেন। পুরো জেলায় ২৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৬৮ জন আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। এখনও আমরা মাঠে আছি, মানুষকে সচেতন করছি। তারা যাতে জীবন রক্ষার জন্য হলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যায়। এরপরও না গেলে তাদের আনতে বাধ্য করা হবে।’