সাদা চামড়ার দুজন মানুষ। চেহারা আর ভাষা যেন অজানা-অচেনা। হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছেন এক বৃদ্ধের সঙ্গে। কখনোই গ্রামের মেঠোপথে তাদের দেখা যায়নি। যাবেই-বা কী করে। এরা কেউই বাংলাদেশের নন, এসেছেন সুদূর চীন থেকে। কথা বলা ওই বৃদ্ধ একজন চা বিক্রেতা।
শনিবার (১১ মে) কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার নলুয়া চাঁদপুর এলাকার চা বিক্রেতার সঙ্গে তার স্কুলে চীনা নাগরিকদের দেখা যায়। কুমিল্লার চা বিক্রেতা আবদুল খালেকের প্রতিষ্ঠিত নলুয়া চাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয় দেখতে এসেছেন তারা। তাদের আগমনে সাজ সাজ রব ওঠে স্কুল প্রাঙ্গণে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে চা বিক্রি করে জমানো ৭ হাজার টাকায় ৫২ শতক জমি কেনেন নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের আবদুল খালেক। ১৯৯৭ ওই জমি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন। প্রতিষ্ঠার ২২ বছর পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। প্রতিবছর আশপাশের সকল স্কুলের ফলাফলকে ছাড়িয়ে যায় স্কুলটি। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম মজুমদার সাগরের আমন্ত্রণে তারা এসেছেন এই স্কুলটি দেখতে।
ওই দুই চীনা নাগরিক হলেন কুমিল্লা ইপিজেডের সিং স্যাংগ সুজ কোম্পানির সিনিয়র ম্যানেজার মি. টেডি ও সং শিন লেদার কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মি. অং।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম মজুমদার সাগর বলেন, ‘স্কুল দেখেই তারা অভিভূত হয়েছেন। বিশেষ করে চা বিক্রেতার এই আত্মদানের কথা তারা বারবার স্মরণ করেছেন। আমি সম্প্রতি তাদের দাওয়াত দিই আমাদের স্কুলে আসার জন্য। তারা স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রশংসা করেন। তারা বারবার বলছিলেন এই স্কুলের ছেলেমেয়েরা অনেক সম্ভাবনা বয়ে আনতে পারে। তাই তারা চান এই এলাকায় একটি ট্রেনিং সেন্টার করতে। এতে করে এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা সেখানে প্রশিক্ষণ নেবে এবং কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের যেকোনও স্থানে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে নিজের জায়গা করে নিতে পারবে। যা এলাকার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতিতেও বড় অবদান হিসেবে ধরা দেবে। তাদের এ পরিকল্পনায় আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত সব সময় প্রস্তুত। এখন শুধু প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা।’
বিদ্যালয়ে তাদের বরণ করে নেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল খালেক, গ্রামীণ ফোনের ডিজিএম নান্টু দাশ, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার, স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহ আলম, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা আক্তার হোসেন রুবেলসহ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা।