X
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
১১ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশে উৎপাদন হলো বিশ্বসেরা কফি, কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:০১আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:০১

দেশে চা উৎপাদন ও রফতানি হলেও কফি সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। এ অবস্থায় পাঁচ বছর গবেষণার পর পাহাড়ে চাষ উপযোগী বিশ্বসেরা কফির দুটি জাত উদ্ভাবন করেছেন রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের রাইখালী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। জাত দুটির নাম দেওয়া হয়েছে বারি কফি-১ ও ২। এগুলো এরাবিকা ও রোবেস্টা জাতের কফি। গত জুন মাসে পাহাড়ের কয়েকটি স্থানে চাষ করা হয়েছে। গত মাসে সেসব গাছে ফলন এসেছে। এটিকে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। একইসঙ্গে এই জাতের কফি পাহাড়ে ব্যাপক হারে চাষ হলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন তারা।

রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাঁচ বছর গবেষণার পর এরাবিকা ও রোবেস্টা কফির জাত দুটি উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। দুটি জাতই বিশ্বসেরা। উদ্ভাবিত জাতের নাম দেওয়া হয়েছে বারি কফি-১ ও ২। আগামী দুই বছরের মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপক হারে এর চাষাবাদ হবে।

এগুলো এরাবিকা ও রোবেস্টা জাতের কফি

রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেন্দ্রটি পাহাড়ের কৃষিতে নতুন নতুন ফলের জাত উদ্ভাবন করে আসছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফলের ১৯টি জাত উদ্ভাবন করে সফলতা পেয়েছে। তবে এবার কফির নতুন দুটি জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে পাহাড়ের কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

কফির নতুন দুটি জাত চাষাবাদে বিশেষ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে বলে জানালেন রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ি অঞ্চলের যেকোনো এলাকায় ছায়াযুক্ত স্থানে আবাদ করা যাবে। বিভিন্ন বাগানে সাথী ফসল হিসেবেও চাষ করা যাবে। তিন থেকে চার বছরের মধ্যে গাছে ফল আসবে। প্রতিটি গাছ থেকে চার-পাঁচ কেজি কফি পাওয়া সম্ভব। হিসাবে প্রতি হেক্টরে সাত-আট মেট্রিক টন উৎপাদন সম্ভব। কফি সাথী ফসল হওয়ায় আলাদা খরচ কিংবা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।’ 

এই জাতের কফি পাহাড়ে ব্যাপক হারে চাষ হলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন গবেষক ও বিজ্ঞানীরা

দুটি জাত চাষাবাদ সহজ বিধায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে উল্লেখ করে মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাহাড়ের কয়েকটি এলাকায় এই কফি চাষ হয়েছে। এতে আমরা সফলতা পেয়েছি।’ 

কাপ্তাইয়ের রাইখালী এলাকার চাষি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সাথী ফসল হওয়ায় কফি আবাদে আলাদা খরচ ও পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। কফির বাগান করতে আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। চাষে খরচ কম হওয়ায় আমাদেরও আগ্রহ আছে। প্রথমবার অল্প জমিতে চাষ করেছি। অনেকে বাগান দেখতে আসছেন।’

একই এলাকার কফি চাষি মো. শামসুল হক বলেন, ‘প্রথমবারই গাছে ভালো ফলন এসেছে। তবে চাষের জন্য নির্দিষ্ট জমির প্রয়োজন নেই। যেকোনো স্থানে লাগানো যায়। অন্য গাছের ছায়া পেলেই কফির ভালো ফলন হয়। আমি সাথী ফসল হিসেবে লাগিয়েছি। আশা করছি, আর্থিকভাবে লাভবান হবো।’

পাহাড়ি এলাকায় বিশ্বসেরা এরাবিকা ও রোবেস্টা কফি চাষে আমরা সফলতা পেয়েছি বলে উল্লেখ করেছেন রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় চাষে যেহেতু সফলতা পেয়েছি সেহেতু মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে এখন কাজ করছি আমরা। আশা করছি, আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে পাহাড়ের প্রত্যেক স্থানে এর আবাদ ছড়িয়ে পড়বে।’

উদ্ভাবিত জাতের কফির নাম দেওয়া হয়েছে বারি কফি-১ ও ২

বাংলাদেশে কফির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এবং বিশ্বে অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত জানিয়ে এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আগামী কয়েক বছরে পাহাড়ে কফি চাষের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করছি আমরা। সেভাবে কার্যক্রম চলছে আমাদের।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি অঞ্চল কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, ‘কফি চাষের পদ্ধতিটা যেমন সহজ তেমন পরিবহন করাও সহজ। পাশাপাশি সংরক্ষণের সুবিধা রয়েছে। তাই আশা করছি, পার্বত্য অঞ্চলে কফি চাষ বাড়ানো গেলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
কৃষকরা ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন রসুন, বাজারে ১২০
গোপালগঞ্জে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ব্রি ধান-১০৭ কাটা উৎসব
রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬০ টাকা
সর্বশেষ খবর
ত্বকের যত্নে গোলাপজল ব্যবহার করলে যেসব উপকার পাবেন
ত্বকের যত্নে গোলাপজল ব্যবহার করলে যেসব উপকার পাবেন
ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়লো ঘরের ওপর, প্রাণ গেলো ঘুমন্ত নারীর
ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়লো ঘরের ওপর, প্রাণ গেলো ঘুমন্ত নারীর
পায়ুপথে গ্যাস ঢুকিয়ে শিশুহত্যা, শিশুশ্রমের নির্মম চিত্র
পায়ুপথে গ্যাস ঢুকিয়ে শিশুহত্যা, শিশুশ্রমের নির্মম চিত্র
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ফুটবল থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত সাবেক ব্রাজিল কোচের 
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ফুটবল থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত সাবেক ব্রাজিল কোচের 
সর্বাধিক পঠিত
জোর করে পদত্যাগ করানো প্রধান শিক্ষককে মারধর করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হলো
জোর করে পদত্যাগ করানো প্রধান শিক্ষককে মারধর করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হলো
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন
কাশ্মীর ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
কাশ্মীর ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
‘ছাত্ররা শিক্ষকদের মর্যাদা দেয়নি, দোষ থাকলে ভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক’
‘ছাত্ররা শিক্ষকদের মর্যাদা দেয়নি, দোষ থাকলে ভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক’
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস: বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশে নেমে আসবে
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস: বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশে নেমে আসবে