ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কক্সবাজারে। হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ায় কক্সবাজারের সাধারণ মানুষ বুঝে উঠতে পারেননি। এ জন্য আবহাওয়া অফিসকে দায়ী করছেন তারা। সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণে কক্সবাজারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) সকালে কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া এলাকার গৃহবধূ শাহেনা আক্তারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি দাবি করেন, সাগরে ৬ নং বিপদ সংকেত উঠলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়নি কিছু। ফলে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রেও যাইনি।
একই এলাকার আব্দুল জব্বার দাবি করেন, আবহাওয়া অফিসের বার্তা ছিল, ঘূর্ণিঝড়টি ভোলা, বরিশালমুখী। কিন্তু হঠাৎ রাতে কক্সবাজারে তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড়। এতে আমরা যে যেখানে অবস্থান করছিলাম, সেখানে আটকা পড়েছি। সমিতিপাড়া এলাকায় অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে গেছে।
কুতুবদিয়া পাড়ার মরিয়ম খাতুন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে গাছ পড়ে আমার বাড়ি ভেঙে গেছে। এখন আমার পরিবার খোলা আকাশের নিচে।
চকরিয়ায় বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বখতিয়ার উদ্দিন রুবেল বলেন, বাতাসের তাণ্ডবে উপকূলীয় ইউনিয়নের অনন্ত দুই শতাধিক ঘর ভেঙে গেছে। আসকর আলীর মৃত্যু ছাড়াও আহত হয়েছেন ২০ জনের বেশি।
তিনি দাবি করে, আবহাওয়া অফিসের বার্তা ও প্রশাসনে প্রস্তুতি মিলে অনেক আগেই আঘাত এনেছে হামুন। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কল্পনার বেশি। এ ছাড়াও পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, ডেমুশিয়া, ও কোনাখালী ইউনিয়নে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় ঘরের টিন, গাছ ডালাপালা উড়ে পড়ে অন্তত ১০ জন লোক আহত হন।
মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ কামাল বলেন, মহেশখালীর কুতুবজোম, হোয়ানক, ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কালারমারছড়া ইউনিয়ন লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ঘর, গাছ ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। ধলঘাটার কিছু এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছিল। পরে নেমে গেছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, প্রধান সড়ক ও উপসড়কে গাছ ভেঙে পড়ে অনেক অংশ এখনও বন্ধ। তা সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। পৌরসভায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ভেঙে গেছে আড়াই শতাধিক ঘর। সমিতিপাড়া, ফদনার ডেইল, নাজিরারটেক এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ জানতে কাজ চলছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় জানতে বিলম্ব হচ্ছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে অচল হয়ে পড়েছে কক্সবাজার। নেই বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক। একইসঙ্গে সড়ক-উপসড়কে গাছ উপড়ে বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। দেয়াল ও গাছ চাপায় প্রাণ গেছে তিন জনের। আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক।
কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার খুইল্ল্যা মিয়ার ছেলে আবদুল খালেক (৪০), মহেশখালী এলাকার হারাধন দে (৪৫) ও চকরিয়া বদরখালী এলাকার জাফর আহমদের ছেলে আসকর আলী (৪৭) মারা গেছেন। আহতের সংখ্যা হয় শতাধিক।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পরই ঘূর্ণিঝড় হামুন আঘাত হানে। এতে উপড়ে যায় গাছপালা ও ঘরবাড়ি। কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড়, সদর হাসপাতাল সড়কেই উপড়ে পড়েছে ১৫টির বেশি গাছ। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে বৈদ্যুতিক তার, বন্ধ যানবাহন চলাচল, নেই বিদ্যুৎ।
শুধু এই সড়কই নয়; কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে উপড়ে পড়েছে বিশাল আকৃতির গাছ। বৈদ্যুতিক খুঁটিও উপড়ে পড়েছে সড়কে। কক্সবাজার শহরের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও একই অবস্থা। চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ।
জেলা প্রশাসক বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে এ পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। জেলা শহর ছাড়াও উপজেলাগুলোতে সড়ক উপসড়কে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। বিদ্যুৎ, নেটওয়ার্ক না থাকায় কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কক্সবাজার অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।