রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বর্ষবরণ। উৎসব উপলক্ষে সোমবার (৩ এপ্রিল) বিকালে রাঙামাটি জেলা পরিষদের উদ্যোগে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ তরুণীরা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের পোশাক পড়ে অংশ নেন। শোভাযাত্রা শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
বাংলা বর্ষ বিদায় ও বরণ উপলক্ষে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সামাজিক আয়োজন বৈসাবি উৎসবে মেতে উঠার অপেক্ষায় পাহাড়ি জনপদ। যার রঙ ছড়াবে বিজু, বৈসুক, সাংগ্রাই, বিহুসহ নানান নামে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন উৎসব একত্রে বৈসাবি উৎসব নামে এ উৎসব পার্বত্যাঞ্চলে পালন করা হয়। উৎসবে এবারো থাকছে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, নদীতে ফুল ভাসানো, পানি খেলাসহ বর্ণিল সব পর্ব। থাকছে নানা জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
শোভাযাত্রা শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ফিতা কেটে পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। পরে অতিথিরা বেলুন ও পায়রা উড়ান। নানা জাতিগোষ্ঠীর পাহাড়ি নৃত্য পরিবেশনের মধ্যদিয়ে অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইমতাজ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের সদস্য রেমলিয়ানা পাংখোয়া। তাছাড়া আলোচনা সভায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
পাঁচ দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়েছে পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, অলংকার, পোশাক, বাদ্যযন্ত্র ও খাবার নিয়ে মেলার। মেলায় স্থান পেয়েছে প্রায় ৮০টি স্টল। এ ছাড়া পাঁচ দিনব্যাপী মেলায় ঐতিহ্যবাহী ঘিলা খেলা, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, তঞ্চঙ্গ্যা নাটক মঞ্চায়ন, পাজন রান্না প্রতিযোগিতা, ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র সংগীত পরিবেশনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। মেলা আগামী ৭ এপ্রিল শেষ হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য অঞ্চলের সংস্কৃতি ভাষা উন্নয়নের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। পার্বত্য এলাকার সব জাতিগোষ্ঠী সম্প্রতির মাধ্যমে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, এ উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হবে। এ উৎসবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্য পোশাক, খাবার ইত্যাদি ঐতিহ্যগুলো রক্ষা করতে হবে।’
রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইমতাজ উদ্দিন বলেন, রাঙামাটির যে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আছে এবং সকল ক্ষেত্রে যে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে এটার জন্য যা যা করনীয় রিজিয়নের পক্ষ থেকে সবকিছুই করা হবে। এই উৎসব সব সম্প্রসাদয়ের মধ্যে যেমন সম্প্রতি ধীর করবে, তেমন সুখী সমৃদ্ধ দেশ গঠনে সহায়তা করবে। এই উৎসব সব সম্প্রদায়ের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, এই অনুষ্ঠানের শুধুমাত্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ অংশ নেয় নি। অনেক বাঙালি বন্ধুরাও এসেছে। এটাই সম্প্রতির রাঙামাটি। এর মাধ্যমে সবার মধ্যে সম্প্রতি আর বৃদ্ধি পাবে। আমরা সম্প্রতির বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
এছাড়া এই মেলায় রয়েছে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতিযোগিতা, নাটক মঞ্চায়ন, পাঁচন রান্না, কবিতা পাঠসহ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ। ৩ এপ্রিল শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। এ মেলা প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলা বর্ষকে বিদায় জানানোর এ অনুষ্ঠান তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে বিবেচিত। এই উৎসব চাকমা জনগোষ্ঠী বিজু নামে, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী মানুষ সাংগ্রাই, মারমা জনগোষ্ঠী মানুষ বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী বিষু, কোনো কোনো জনগোষ্ঠী বিহু নামে পালন করে থাকে।
বৈসুকের ‘বৈ’ সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ ও বিজু, বিষু ও বিহুর ‘বি’ নিয়ে উৎসবটিকে সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ নামে পালন করা হয়। পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনের পর থেকে পাহাড়ের সব জনগোষ্ঠীকে সম্মিলিতভাবে উৎসবে একীভূত করার জন্য এই সংক্ষেপে নামটি প্রচলন করা হয়।