প্রাকৃতিকভাবে অর্গানিক পদ্ধতিতে শুঁটকি তৈরি করছেন কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক শুঁটকিপল্লীর বাসিন্দা আমান উল্লাহ। লবণ, বিষ ও কেমিক্যালমুক্ত তার এই শুঁটকির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অল্প পরিমাণ হলুদ ও মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে রোদে শুকানো স্বাস্থ্যসম্মত এসব শুঁটকি এখন বিদেশেও সুনাম কুড়িয়েছে। শুঁটকি বিক্রি করে কোটিপতি হয়েছেন আমান।
আমান উল্লাহ ছিলেন কক্সবাজার নাজিরারটেকের শুঁটকিপল্লীর একসময়ের শ্রমিক। এখন তিনি বড় ব্যবসায়ী। হাজারও ভেজালের ভিড়ে সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে শুঁটকি তৈরি করে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। বর্তমানে দেশে-বিদেশে রয়েছে তার অর্গানিক শুঁটকির সুনাম। দিন দিন এই শুঁটকির চাহিদা বাড়তে থাকায় নিজে গড়ে তুলেছেন শাহ আমানত নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভোক্তাদের চাহিদামতো প্যাকেজিং করে বাজারজাত করেন তিনি। উৎপাদনের সময় লবণ, বিষ ও ফরমালিনসহ অন্যান্য ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহার না হওয়ায় শুঁটকির প্রাকৃতিক স্বাদ ও গুণগত মান ঠিক থাকে বলে জানান আমান উল্লাহ।

আমান উল্লাহ আরও জানান, একসময় রোদে শুকিয়ে তার বাপ-দাদারা শুঁটকি উৎপাদন করতেন। ওই সময়ে শুঁটকির অনেক স্বাদ ছিল। কিন্তু এখন সেই স্বাদের শুঁটকি হারিয়ে গেছে। নানা প্রকার কেমিক্যাল দিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করে বাজারজাত করা হয়। এতে স্বাদ যেমন কমেছে, তেমনি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় বাপ-দাদার আমলের মতো প্রাকৃতিকভাবে শুঁটকি উৎপাদনের কথা মাথায় আসে তার।
তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলা মৎস্য অফিসের পরামর্শে শুরু করি অর্গানিকভাবে মাছ শুকানোর কাজ। অল্প পরিমাণ মরিচ ও হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে কোনও ধরনের কেমিক্যাল ছাড়াই উৎপাদন করি শুঁটকি। এই শুঁটকি শুরুতেই ক্রেতাদের নজর কাড়ে। দিন দিন ক্রেতাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছি। এরপর প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে অর্গানিক শুঁটকির খবর। এখন শুধু দেশে নয়, রফতানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। চাহিদার জোগান দিতে শাহ আমানত ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়েছি। প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ভিড় করছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।

তিনি বলেন, অর্গানিক শুঁটকির উৎপাদন দেখে কক্সবাজার মৎস্য অফিসের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন এনজিও। তারা আমাকে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছে। ইতোমধ্যে পেয়েছি জাতীয় মৎস্য পুরস্কার। আমার অর্গানিক শুঁটকির সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় বেড়েছে ব্যবসার পরিধি। এ কারণে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার অর্গানিক শুঁটকি উৎপাদিত হচ্ছে। আগামী দিনে অর্গানিক শুঁটকির বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করছি।
জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান বলেন, অর্গানিক শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করণের সময় হলুদ ও মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করায় সম্পূর্ণ উজ্জ্বল দেখায়। মাছের গুণগত মান ঠিক থাকে। স্বাস্থ্যসম্মত এবং সুস্বাদু হয়। এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছেন আমান উল্লাহ। শুটকি বিক্রি করে আমান এখন কোটিপতি।

এসএম খালেকুজ্জামান আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যসম্মত অর্গানিক শুঁটকি উৎপাদনে মৎস্য বিভাগ জোর দিচ্ছে। গুণগত মান ঠিক রাখতে মনিটরিং জোরদার করেছি। শ্রমিক ও উৎপাদকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখানকার উৎপাদিত অর্গানিক শুঁটকি মধ্যপ্রাচ্য, চীন, হংকং ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে।’
কক্সবাজারে উৎপাদিত শুঁটকির মানোন্নয়নে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহায়তা করছে। ভবিষ্যতে অর্গানিক শুঁটকির বিপ্লব ঘটবে বলে প্রত্যাশা উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের।