ফেনীর পরশুরামের জয়ন্তীনগর গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে রাবার বাগান। বাণিজ্যিকভাবে রাবার উৎপাদনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখে স্থানীয়রাও রাবার চাষে উৎসাহী হয়ে উঠেছে।
উদ্যোক্তারা চাইলে রাবার বাগানের জন্য সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ২০১০ সালে পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী জয়ন্তীনগর গ্রামের হাজি মো. মোস্তফা ২৫ একর জমিতে রাবার বাগান করেছেন। ৮ হাজার রাবার চারা রোপণ করে ছিলেন। রাবার গাছগুলোয় ঝুলছে ছোট ছোট মাটির পাত্র। সেই পাত্রের কাটা অংশ দিয়ে বেয়ে পড়ছে দুধের মতো সাদা রাবারের কষ। ।
সাইয়ুম মারমা নামে এক শ্রমিক বলেন,‘কষ সংগ্রহের জন্য রাবার গাছ পরিপক্ব হতে সময় লাগে আট বছর। পরে ওই কষ সংগ্রহ করেন শ্রমিকরা। সারা বছরই রাবার উৎপাদন হয়। তবে অক্টোবর-জানুয়ারি চার মাস রাবার উৎপাদনের ভর মৌসুম। শীতে কষ আহরণ বেশি হয়, বর্ষায় কমে যায়।
তিনি আরও জানান, বাগান থেকে কষ এনে শুকনো রাবার শিটে পরিণত করতে সময় লাগে সর্বোচ্চ সাত দিন। এরপর রোলার মেশিনের সাহায্যে কষ থেকে পানি বের করে ড্রিপিং শেডে শুকিয়ে ধুমঘরে তা পোড়ানো হয়। ওই প্রক্রিয়া শেষে রাবারের ৫০ কেজি ওজনের বান্ডিল গুদামজাত করা হয়।
হাজি মো.মোস্তফা জানান, কষ সংগ্রহের জন্য আড়াই হাজার গাছে পাত্র বসানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব গাছেই পাত্র বসানো হবে। একটি রাবার গাছ সাধারণত রোপণের সাত-আট বছর পর থেকে ৩০-৩২ বছর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে কষ দিয়ে থাকে। গাছের বয়স ৩৫ বছর হলে এর অর্থনৈতিক জীবন চক্র শেষ হয়ে যায়। এসব গাছ থেকে গড়ে পাঁচ থেকে আট ঘনফুট গোল কাঠ পাওয়া যায়। কষ সংগ্রহে টেপিংয়ের কাজটা সূর্যোদয়ের আগেই করতে হয়। কারণ অন্ধকারে কষনালিগুলোয় কষপ্রবাহ হয়। সূর্যের তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নালিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে কষপ্রবাহের স্বাভাবিক গতির ব্যাঘাত ঘটে।
তিনি আরও জানান,‘গোড়া থেকে ৭০-৭৫ সেন্টিমিটার ওপরে গাছের চারদিকে এক মিটার করে কাটা হয়। কাটা অংশের নিচে একটি মাটির তৈরি বাটি বসিয়ে দেওয়া হয়। সে বাটিতে গাছ থেকে গড়িয়ে পড়ে কষ। এ বাগান থেকে গড়ে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার লিটার কষ বিক্রি সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘একটি গাছ থেকে দৈনিক প্রায় ৫০০ গ্রাম রাবার পাওয়া যাবে। বাজারদর অনুযায়ী, প্রতি লিটার রাবার ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি করা যাবে। কষ সংগ্রহ ও বাগান পরিচর্যায় নিয়োজিত রয়েছেন ২০-২৫ জন শ্রমিক।
হাজি মো. মোস্তফার ছেলে মির্জানগর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টু জানান, চট্টগ্রামের মেসার্স আরিফ এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি ইতোমধ্যে তাদের একটি বাগান থেকে রাবার কিনে নিয়েছে। প্রথম চালানে তারা দুই টন ১৩০ কেজি রাবার নিয়েছে, পর্যায়ক্রমে আরও নেবে বলে জানিয়েছে। বিক্রি করা রাবারের দাম দুই লাখ ১৩ হাজার টাকা।
পরশুরাম উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, কৃষিভিত্তিক শিল্পের মধ্যে রাবার অনেক লাভজনক। দেশের পার্বত্য এলাকাগুলোয় রাবার বাগান করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন। অন্য জেলায় এটি তেমন দেখা যায় না।
তিনি আরও বলেন,‘ফেনীর আর কোথাও রাবার বাগান নেই। সীমান্তবর্তী জয়ন্তীনগর গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা বাগানটি এ এলাকায় রাবার চাষে একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। উদ্যোক্তারা চাইলে কৃষি বিভাগ থেকে রাবার বাগানের জন্য সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে। এখন সীমান্তবর্তী এলাকার অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে রাবার উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।