পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় এক পর্যটককে মারধর করে ২৩ হাজার ৯০০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন যুবদল, শ্রমিক দল ও মৎস্যজীবী দলের নেতারা। গতকাল রবিবার রাতে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল ‘আপন ভুবনে’ এ ঘটনা ঘটে। কুয়াকাটা পৌর শ্রমিক দলের সিনিয়র সহসভাপতি জসিম মৃধা, মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি আবু বকরের নেতৃত্বে ওই পর্যটককে মারধর করা হয়।
ভুক্তভোগী পর্যটক জানান, গত ১৭ এপ্রিল আবাসিক হোটেল আপন ভুবনে ওঠেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে ঘুরতে আসায় মন খারাপ থাকায় রবিবার রাতে ১০০ টাকা দিয়ে এক ভ্যানচালককে গাঁজা আনতে পাঠান। কিছুক্ষণ পর ভ্যানচালক তার হাতে গাঁজা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সহযোগী আল-আমিন, মোস্তাফিজ ও বেল্লালসহ আরও দুজন তাকে মারধর শুরু করেন। পরে পৌর শ্রমিক দলের সিনিয়র সহসভাপতি জসিম মৃধা, মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি আবু বকর ওই পর্যটকে হোটেলের রিসিপশনে নিয়ে আবারও মারধর করেন।
একপর্যায়ে তারা পর্যটকের হোটেল কক্ষে গিয়ে ২২ হাজার টাকা ব্যাগ থেকে বের করে নেন। সেইসঙ্গে তার দুটি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যান। আবু সালেহ টাকা নিয়ে ওয়ার্ড যুবদল নেতা আবু বকরকে দেন। পরে পর্যটকের দুটি মোবাইল ফিরিয়ে দিলেও টাকাগুলো নিয়ে হোটেল ত্যাগ করেন তারা। এ খবর জানাজানি হলে হোটেলের পর্যটকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
হোটেল ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, ‘রবিবার গভীর রাতে হোটেলের সামনে চিৎকার শুনে গিয়ে দেখি এক পর্যটককে মারধর করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। আমি তাদের হোটেলের রিসিপশনে এসে বিষয়টি সমাধানের জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু রিসিপশনে এনে আবারও পর্যটককে মারধর করেন এবং তার কক্ষে ঢুকে ২৩ হাজার ৯০০ টাকা ও দুটি মোবাইল ছিনিয়ে নেন। পরে মোবাইল ফেরত দিলেও টাকা নিয়ে চলে যান তারা।’
ভুক্তভোগী পর্যটক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হোটেল কক্ষে আমার ব্যাগে ২২ হাজার টাকা ছিল। প্যান্টের পকেটে ছিল এক হাজার ৯০০ টাকা। সব টাকা জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে যান বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় রাতে আমাকে না খেয়ে থাকতে হয়েছে। কারণ আমার কাছে কোনও টাকা ছিল না। সোমবার বিষয়টি জানাজানি হলে ওই নেতারা আমাকে ১০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন, বাকি টাকা দেননি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কুয়াকাটা পৌর মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ বলেন, ‘ওই ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। হোটেল ম্যানেজার ওই পর্যটকের ২২ হাজার টাকা আমার কাছে দিয়েছেন। আমি টাকাগুলো ওয়ার্ড যুবদলের নেতা আবু বকরের কাছে দিয়েছি। পরে কী হয়েছে, তা আমি জানি না।’
ওয়ার্ড যুবদলের নেতা আবু বকর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি আবু সালেহের কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে ওই পর্যটককে ১০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে চলে এসেছি।’
এদিকে, হোটেল কক্ষে বসে শ্রমিক দলের সিনিয়র সহসভাপতি জসিম মৃধাকে পুলিশ বলে পরিচয় দিয়েছেন তাদের নেতাকর্মীরা, এমনটি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পর্যটক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জসিম মৃধা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার সামনে কেউ আমাকে পুলিশ হিসেবে পরিচয় করে দেয়নি। তবে পর্যটককে মারধর করা হয়েছে এটা সত্য। বিষয়টি ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। তাকে ১০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি মানিক ফকির বলেন, ‘বিষয়টি সোমবার বিকালে সমাধান হয়েছে। ওই পর্যটককে কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে কত টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে, তা বলতে পারবো না।’
এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌর যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মো. ফারুক বলেন, ‘যুবদলের কোনও নেতা এই ঘটনায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনও আবাসিক হোটেলে অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। সেখানে দলের কোনও নেতাকর্মীর যাওয়ার সুযোগ নেই।’
পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনও দুষ্কৃতকারীর স্থান বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনে হবে না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ বলেন, ‘অপরাধীদের বিএনপিতে কোনও স্থান নেই। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। তবে ভুক্তভোগী পর্যটক এখনও থানায় কোনও অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’