জুলাই আন্দোলনে শহীদের কলেজছাত্রী মেয়েকে (১৭) পটুয়াখালীর দুমকির গ্রামের বাড়িতে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হবে। বাড়ির আঙিনায় তার বৃদ্ধ দাদা কবর খুঁড়েছেন। এরই মধ্যে কবর খোঁড়ার কাজ শেষ হয়েছে।
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিকালে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ইতোমধ্যে মরদেহ নিয়ে স্বজনরা দুমকির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। মরদেহ নিয়ে বাড়ি পৌঁছাতে তাদের সন্ধ্যা হবে। সেখানে জানাজা শেষে দাফন করা হবে। এর আগে শনিবার রাতে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার বাসা থেকে কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত ১৮ মার্চ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তিনি। গলায় ফাঁস নিয়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেন বলে জানায় পুলিশ।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই কিশোরীর দাদা একাই কবর খুঁড়েছেন। এর আগে ছেলের মরদেহ দাফনের জন্যও কবর খুঁড়েছিলেন তিনি। পাংগাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিশোরীর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ধোপারহাট গ্রামে নিজ বাড়ি সংলগ্ন বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
কলেজছাত্রীর দাদা জানান, শনিবার সকালে নাতনির সঙ্গে কথা হয়েছিল তার। জেলা প্রশাসক সহায়তার দুই লাখ টাকা আনতে তাকে ফোন করেছেন, সেটি নাতনিকে জানান। জবাবে নাতনি জানায়, জেলা প্রশাসক তাকে সোমবার যেতে বলেছেন। কিন্তু রাত ১০টার দিকে কলেজছাত্রীর চাচা দাদাকে ফোন করে আত্মহত্যার কথা জানান।
দাদা বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে ছেলেকে হারালাম। ১৮ মার্চ নাতনি ধর্ষণের শিকার হয়। আসামিরাও ধরা পড়ে জেলহাজতে রয়েছে। ভাবছিলাম যা হয়েছে, নাতনি তো বেঁচে থাকবে। অথচ সেও চলে গেলো।’
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে ওই কলেজছাত্রীর বাবা গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার শহীদ বাবাকে দুমকি উপজেলার বাড়িতে দাফন করা হয়। ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন কলেজশিক্ষার্থী। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিল। এরপর ২০ মার্চ দুমকি থানায় মামলা করেন ছাত্রী।
মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ওই ঘটনার পর থেকে কলেজছাত্রী ঢাকার আদাবর থানা এলাকার শেখেরটেকে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছিলেন। শনিবার রাতে সেখানেই আত্মহত্যা করেন।
কলেজছাত্রীর চাচা বলেন, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ভাতিজি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। বিচার হবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কায় ছিল। এরই মধ্যে এ ঘটনা ঘটলো। ভাতিজি অত্যন্ত সাহসী ছিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছিল সবসময়। কিন্তু বিচারহীনতার ভয়, সমাজের অবজ্ঞা ও মানসিক চাপ শেষ পর্যন্ত তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলো। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।