বরগুনার বেতাগীতে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যানারে সাবেক বিএনপি নেতার নাম না দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে বেতাগী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বেতাগী পৌর শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
সংঘর্ষে গুরুতর আহতরা হলেন– উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. হুমায়ুন কবির মল্লিক, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জামাল খান ও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. শোয়েব কবির। এর মধ্যে জামাল খানের অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্যদের বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেতাগী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বেতাগী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির মল্লিক। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গভর্নিং বডির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির গাজী। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহজাহান কবিরের ছেলে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শোয়েব কবির অনুষ্ঠানে এসে উপস্থিত হন। তিনি অনুষ্ঠানের ব্যানারে তার বাবার নাম দেখতে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হন। খবর পেয়ে শাহজাহান কবির তার লোকজন নিয়ে কলেজে প্রবেশ করে কলেজের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করতে থাকেন। একপর্যায়ে হুমায়ুন মল্লিকের নাকে ঘুষি দেন শাহজাহান কবির। এ খবর বাইরে ছড়িয়ে পড়লে হুমায়ুন মল্লিকের নেতাকর্মীরাও ঘটনাস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল খান অভিযোগ করেন, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শোয়েব কবির তার সন্ত্রাসীবাহিনী নিয়ে যুবদলের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করেছে।
এ বিষয়ে বেতাগী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহিন বলেন, ‘কলেজের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে শাহজাহান কবিরকে দাওয়াত কার্ড দিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে বর্তমানে কোনও দলীয় পদ না থাকায় অনুষ্ঠানের ব্যানারে তার নাম রাখা হয়নি। এ কারণে তিনি ও তার ছেলে শোয়েব কবির লোকজন নিয়ে কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।’
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. হুমায়ুন কবির মল্লিক বলেন, ‘সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান কবির ও তার ছেলে শোয়েবের লোকজনের হামলায় আমিসহ দলের কয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছি। বিষয়টি দলের হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে বেতাগী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহজাহান কবির বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে আমার বড় ছেলের সঙ্গে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হুমায়ূন কবিরের লোকদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আমার ছেলের মাথায় আঘাত করা হয়। এরপর উভয়পক্ষের পোলাপানের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পৌর শহরে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’