বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির তৃতীয় দিনে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে বান্দরোডে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও বর্তমানে শিক্ষকসংকটের কারণে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা—উভয় ক্ষেত্রেই বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা জরুরি। শিক্ষক সংকট নিরসনে মন্ত্রণালয় থেকে পদক্ষেপ না নিলে ডেন্টালের পেশাগত পরীক্ষা এবং ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের বসতে না দেওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিক্ষুব্ধরা।
গত সোমবার থেকে শূন্যপদে শিক্ষক পদায়নের দাবিতে প্রশাসনিক ভবন ও অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীরা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণার পর ক্লাসে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশেষ করে মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথলজি, ফিজিওলজি, সিসিইউ, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ডিপার্টমেন্টসহ ডেন্টাল ইউনিটেরও অধিকাংশ ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকসংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে মানসম্মত ক্লাস ও প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এতে ভবিষ্যতে চিকিৎসাব্যবস্থার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এদিকে, আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বুধবার দুপুরে চার জন লেকচারার দেওয়া হলে তা মানতে নারাজ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, এই মেডিক্যাল কলেজে ৬০ শতাংশের ওপরে শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এসব শূন্যপদে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
কলেজ প্রশাসন সূত্র জানায়, মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের ৩৩৪টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৪৬ জন। বাকি ১৮৮টি পদ শূন্য রয়েছে।
আজকের সমাবেশে কলেজের এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষকসংকট ইস্যুতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির কারণে মেডিক্যাল কলেজে ক্লাস, পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আমরা কলেজের প্রধান ফটকগুলোতে তালা দিয়ে কমপ্লিট শাটডাউনের ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছি। ১৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে স্মারকলিপি দিয়ে কলেজ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে দাবির কথা জানিয়েছি আমরা। কিন্তু এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কোনও উদ্যোগ নেননি। আমরা দ্রুত শিক্ষকসংকট নিরসনের দাবি জানাচ্ছি, অন্যথায় আন্দোলন চলবে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ডেন্টাল অনুষদের প্রফেশনাল পরীক্ষা এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম ব্যাহত হলে এর দায়ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।’
নিউনেটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিধান চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সকালে কলেজে গিয়ে হাজিরা দিতে পারিনি। তবে তাদের দাবি যৌক্তিক। ভালো শিক্ষার জন্য শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা আশা করি, দ্রুত শিক্ষকসংকট নিরসনে উদ্যোগ নেবে সরকার।’
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই দাবি যৌক্তিক এবং তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি। দ্রুত সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা চলছে।’