পদত্যাগ না করায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের লোকজনকে বের করে দিয়ে দুটি কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় কার্যালয়ের সামনে থেকে উপাচার্যের নামফলকও খুলে ফেলেন তারা।
পদত্যাগ দাবি করা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জুলাই বিল্পবের চেতনা ধারণ না করা ও বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করেন উপাচার্য শুচিতা শরমিন। এ কারণে বুধবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি তোলেন। তারা আজ দুপুর ১২টার মধ্যে উপাচার্যকে পদত্যাগ করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এরই মধ্যে বিকালে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্মরণসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানে উপাচার্য শুচিতা শরমিন প্রধান অতিথি থাকার কথা থাকলেও তাকে বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ওই অনুষ্ঠানের ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসেবে তার নাম মুছে সেখানে সহ-উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম রব্বানিকে প্রধান অতিথি করে অনুষ্ঠান হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, উপাচার্য গত মঙ্গলবার রাত থেকেই ক্যাম্পাসে নেই। তিনি মোবাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করলেও গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ছাত্রদলের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি রেজা শরিফ বলেন, ‘উপাচার্য আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ বিতর্কিত ব্যক্তিকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার বিরোধিতা সত্ত্বেও সহযোগিতা করেছেন। তিনি যোগদানের পর কোনও কাজই সময়মতো ও ঠিকঠাকভাবে করছেন না। নিজের ইচ্ছামাফিক সবকিছু চালাতে চাইছেন। এজন্য উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।’
আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী মো. মোকাব্বেল শেখ বলেন, ‘উপাচার্যকে পদত্যাগ করার জন্য আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিলেও তিনি তা করেননি। এ জন্য সময়সীমা পার হওয়ার পর উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি আমরা।’
উল্লেখ্য, নতুন নিয়োগ পাওয়া কোষাধ্যক্ষ কর্নেল (অব.) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান মঙ্গলবার রাতে যোগদান করতে এলে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে যোগদান না করেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন তিনি।
শিক্ষার্থীরা জানান, আবু হেনা মোস্তফা কামালকে যোগদান করাতে উপাচার্য সহযোগিতা করেন। এসব বিষয়ে বুধবার বিকালে তারা একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। সভায় উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে উপনীত হন। শিক্ষার্থীদের দাবিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীও সংহতি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘আমরা ৫৩ শিক্ষক ও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছি। আমরা এই দাবিতে অনড় আছি এবং থাকবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এ টি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উপাচার্যের কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছেন। বিষয়টি আমরা অবগত আছি।’
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০ আগস্ট পদত্যাগ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক শুচিতা শরমিনকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য।