গাভি দুধ দেবে এটাই তো স্বাভাবিক। তবে গর্ভধারণ ছাড়া বকনা বাছুর দুধ দিলে বিষয়টি অস্বাভাবিক তো বটেই! এমনই এক ঘটনা ঘটেছে বরগুনার বামনা উপজেলায়। যেখানে ৭ মাস বয়সী একটি বাছুর থেকে পাওয়া যাচ্ছে প্রতিদিন আড়াই লিটার দুধ। আর এই খবর চারদিকে চাউর হতেই সেই দুধ নিতে প্রায়ই ভিড় জমাচ্ছেন দূরদূরান্তের লোকজন। স্থানীয়রা বলছেন, ‘অলৌকিক ঘটনা।’ আর চিকিৎসক বলছেন, ‘হরমোনের প্রভাবে এমনটা হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুধ দেওয়া বকনা বাছুরটি বরগুনার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী এলাকার মজিবুল হকের। ২০১৯ সালে একটি অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গাভি কেনেন তিনি। এরপর থেকে গাভিটি পর্যায়ক্রমে বাচ্চা প্রসব করে। সেই বাচ্চা থেকে এই বাছুরটির জন্ম।
সম্প্রতি গর্ভধারণ ছাড়াই হঠাৎ করেই বাছুরটির দুধের বাটন ফুলে যায়। এরপর থেকে নিয়মিত সেই বাছুরটির স্তন থেকে দুধ সংগ্রহ করেন এটির মালিক মজিবুল হক। প্রথমে অল্প পরিমাণে হলেও বর্তমানে বাছুরটি প্রতিদিন আড়াই লিটারের মতো দুধ দেয়।
স্থানীয়দের ধারণা, বিষয়টি অলৌকিক এবং এই দুধ খেলে মিলবে সব সমস্যার সমাধান। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লে দলে দলে সেই দুধ নিতে মাঝেমধ্যে ভিড় জমান দূরদূরান্তের লোকজন।
স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুস গাজী বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশের মজিবুল হকের একটি বাছুর দুধ দেয়। বিষয়টি আমার কাছে অলৌকিক মনে হয়েছে। দেখতে গেলে দেখি বাছুরটি সত্যি সত্যিই দুধ দিচ্ছে। এটি আসলেই বিরল ঘটনা, যা আমি আমার বয়সে দেখিনি। পরে আমিও সেই দুধ খেয়েছি এবং আমার পরিবারের আরও তিন সদস্য তাদের সমস্যার জন্য এই দুধ খেয়েছে।’
গোয়ালে জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, ‘আমি ৩০ বছর যাবৎ গরুর দুধের ব্যবসা করি। কিন্তু আমার জীবনে দেখিনি এমন আজব ঘটনা যে, গর্ভধারণ ছাড়াই গরু দুধ দেয়। তবে এখন আমার নিজের হাতেই সেই গর্ভধারণ করা ছাড়া গরু থেকে প্রতিদিন আড়াই লিটার দুধ পাচ্ছি।’
এ বিষয়ে গরুর মালিক মজিবুল হকের ছেলে মো. রিয়াজুল হক বলেন, ‘গত ২ মাস আগে বাছুরের দুধের বাটনের পরিবর্তন দেখেন বাবা। তখন তিনি বিষয়টি দেখার জন্য বাছুরের দুধের বাটনে টান দিলে হাতে দুধ চলে আসে। পরে আমাদের গরুর দুধ যে দোহন করেন তাকে বিষয়টি বললে সে ওই বাছুর গরুর দুধ দোহনের চেষ্টা করে। এরপর থেকে প্রতিদিন বাছুরটি প্রায় আড়াই লিটার দুধ দিচ্ছে।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বামনা উপজেলার যেই ৭ মাস বয়সী বকনা বাছুর দুধ দিচ্ছে তা মূলত হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে হচ্ছে। ইতঃপূর্বেও আমরা বেশ কয়েকটি জায়গায় এমনটা দেখেছি। এটা কোনও রোগ কিংবা সমস্যা না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ দুধ খাওয়া যাবে। এতে কোনও প্রকার সমস্যা নাই।’