১১ বছর বয়সী সন্তানকে বিয়ে দিলেন বাবা-মা। এরপর স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা ওই কিশোরীকে লোহার শিকলে আটকে রাখে পরিবার। সোমবার (৩ জুন) তাকে শিকলমুক্ত করা হয়েছে। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় এই ঘটনা ঘটেছে।
ওই কিশোরী স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। দুই মাস আগে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় তাকে স্বামীর বাড়িতেও তুলে দেওয়া হয়।
কিশোরীর অভিযোগ, স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর নির্যাতন চালাতো ওই পরিবারের সদস্যরা। নির্যাতন সইতে না পেরে শনিবার (১ জুন) সুযোগ পেয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। এরপর বাবা-মা এবং আত্মীয়স্বজন তাকে বকাঝকা করেন। এক পর্যায়ে তাকে শ্বশুরবাড়ি যেতে চাপ প্রয়োগ করেন। কোনোভাবেই ওই বাড়িতে যাবে না জানালে তাকে তার বাবা-মা লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা বলেন, ওই গ্রামের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারি। ঘটনার শোনার পর স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে এর সত্যতা পাই। তাদের মাধ্যমে মেয়েটিকে শিকলমুক্ত করা হয়। পরে তার বাবা-মাকে রবিবার বিকালে সমাজসেবা অফিসে ডেকে আনা হয়। সেখানে তারা স্বীকার করেন দরিদ্রতার কারণে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছেন। কিন্তু মেয়ে সেখান থেকে চলে আসায় তারা তাকে শ্বশুরবাড়ি যেতে বলে। কিন্তু কোনোভাবেই রাজি না হওয়ায় তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এ কাজ করা ঠিক হয়নি বলেও জানান তারা।
সমাজসেবা কর্মকর্তা আরও বলেন, এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একইসঙ্গে তাদের মুচলেকা আদায় করা হয়। তার মধ্যে প্রধান শর্ত ছিল মেয়ের ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কোনোভাবেই শ্বশুরবাড়ি পাঠানো যাবে না। বয়স পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত স্বামীও মেয়ের কাছে আসতে পারবে না। মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করতে পারবে না এবং কোনোভাবেই তার ওপর অত্যাচার নির্যাতন করা যাবে না। এ ছাড়াও তাদের দেওয়া বিভিন্ন শর্ত মেনে মুচলেকা নিয়ে তাদের সঙ্গে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সমাজসেবা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ফলোআপ থাকবে।
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি বলেন, বিষয়টি জানার পর সঙ্গে সঙ্গে ওই বাড়িতে গিয়ে শিশুটিকে শিকলমুক্ত করা হয়। এ সময় শিশুটির মা-বাবাকেও বকাঝকা করা হয়। দারিদ্র্য পরিবার হওয়ায় তাদের পক্ষে তিনবেলা খাবার এবং লেখাপড়া চালানো সম্ভব না হওয়ায় তারা অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেন। পরে সমাজসেবা থেকেও তাকে জানানো হয় বিষয়টি। এরপর শিশুটির মা-বাবাকে সমাজসেবা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে তারা সেভাবে চলবে বলে জানিয়েছেন বাবা-মা। একইসঙ্গে বিষয়টি আমার পক্ষ থেকে ফলোআপ করা হবে।