বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার এম শাহজাহান ওমর (বীরউত্তম) হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া) সংসদীয় আসনে মনোনয়ন দাখিল করায় হতবাক হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আলোচনায় উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির-১ আসন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে শাহজাহান ওমরের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার বিষয়টি জানাজানি হলে রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে যেন আকাশ থেকে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এর প্রতিক্রিয়ায় তৎক্ষণাৎ সংবাদ সম্মেলন করে রাজাপুর উপজেলা বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন আকন রাজাপুরে শাহজাহান ওমরকে প্রত্যাখ্যান করেন। এ ছাড়া শাহজাহান ওমরের পক্ষে কোনও নেতাকর্মী প্রচারণা চালালে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
অন্যদিকে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শাহাদাৎ হোসেন এক ভিডিও বার্তায় ঝালকাঠিতে শাহজাহান ওমরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগ থেকে শাহজাহান ওমর মনোনয়ন পেলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়নি। এ বিষয়ে রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট খায়রুল আলম সরফরাজ শুক্রবার বিকালে বলেন, ‘আমরা সংগঠন করি আদর্শিক কারণে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যাবো না। শাহজাহান ওমর বীরউত্তম যদি দলের আদর্শ মেনে নির্বাচনে আসে তাহলে আমরা তার সঙ্গে থাকবো।’
এ প্রসঙ্গে আলোচনায় থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘শাহজাহান ওমরকে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না। তাকে রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ার জনগণ প্রত্যাখ্যান করবেন।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রথমে নৌকা প্রতীক পাওয়া বজলুল হক হারুন বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য আমাদের কমিটমেন্ট রয়েছে।’
উল্লেখ্য, বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন ব্যারিস্টার এম. শাহজাহান ওমর। দলের মনোনয়ন নিয়ে পাঁচবার সংসদ সদস্য ও একবার মন্ত্রী হয়েছেন। ১৯৭৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি যে কয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ২০০৮ বাদে সব কয়টি নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন। সবশেষ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীরউত্তম। প্রভাবশালী এ নেতার রাজাপুর বাইপাস মোড়ে বীরউত্তম ভবনে উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ছিল। তিনি দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন সেখানে বসে। কার্যালয়টি নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর থাকতো। বিএনপি নেতাকর্মীদের পোস্টার-ফেস্টুনে সাজানো ছিল ভবনটি। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকালে পাল্টে যায় সবকিছু। হঠাৎ করে বীরউত্তম ভবন থেকে নামিয়ে ফেলা হয় বিএনপির সাইনবোর্ড ও ফেস্টুন। বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এই কার্যালয় এখন শাহজাহান ওমরের নির্বাচনি কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে।