X
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রাঘাতে ১৩ জনের মৃত্যু

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
২৮ এপ্রিল ২০২৫, ২২:৩৮আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ২২:৩৮

কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার ও যশোর জেলায় বজ্রাঘাতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন স্কুলছাত্র, মাদ্রাসাছাত্র, শিক্ষক ও কৃষক। রবিবার ও আজ সোমবার বিভিন্ন সময়ে এসব ঘটনা ঘটে। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ওই সব জেলার বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধিরা।

কুমিল্লা

কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে কুমিল্লার বরুড়া, মুরাদনগর ও দেবিদ্বার উপজেলায় এসব ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগচ্ছ গ্রামে বজ্রাঘাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা বড়হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

মৃত কিশোর দুজন হলো পয়ালগচ্ছ গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন (১৩)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে হালকা মেঘ থাকা পরেও শিশুরা মাঠে ঘুড়ি ওড়াতে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ বজ্রাঘাতে দুই ছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হয়। স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নু এমং মারমা মং বলেন, ‘বজ্রাঘাতে মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি।’

অপরদিকে কুমিল্লার মুরাদনগরে কৃষিজমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রাঘাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। এ ঘটনার পর থেকে তারা শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।

মৃতরা হলেন বাঙ্গরা বাজার থানাধীন কোরবানপুর গ্রামের বীরচরণ দেবনাথের ছেলে নিখিল চন্দ্র দেবনাথ ও আন্দকুট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভূঁইয়া।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় মুরাদনগর উপজেলার ৪ নম্বর পূর্ব ধৈইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশে এই বজ্রাঘাতের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে কৃষক নিখিল চন্দ্র দেবনাথ ও জুয়েল ভুঁইয়া জমিতে ধান কাটার কাজ করতে যায়। হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ হয়ে ঝড়ের সঙ্গে বিকট শব্দে কৃষিজমিতে বজ্রাঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান জানান, কৃষিকাজ করতে গিয়ে কোরবানপুর গ্রামে বজ্রাঘাতে দুই জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দেবিদ্বারের সাহারপাড়ায় বাবার সঙ্গে কৃষিজমি থেকে ধান আনতে গিয়ে মীম আক্তার (১০) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। মীম সাহারপাড়া গ্রামের ইমন মিয়ার মেয়ে। সে সূর্যপুর কোটকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিম বাবা ও নানার সঙ্গে জমি থেকে কাটা বোরো ধান আনতে যায়। এ সময় বজ্রবৃষ্টি হয়। পাশে বজ্রপাত হলে বিকট শব্দে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে সে মারা যায়।

দেবিদ্বার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খাঁন বলেন, ‘শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। সরকার থেকে তার পরিবারকে সহায়তা করা হবে।’

কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের দুই হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে বজ্রাঘাতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন কৃষক ইন্দ্রজিৎ দাস (৩৫), স্বাধীন মিয়া (১৪) ও ফুলেছা বেগম (৬৫)।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে অষ্টগ্রামের হাওরে ধান কাটতে গেলে পৃথক বজ্রাঘাতে উল্লিখিত দুই জন কৃষক ও মিঠামইনে নিজের খলায় ধানের খড় ঢাকতে গেলে ফুলেছা বেগমের এ মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

মৃত ইন্দ্রজিৎ দাস অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত জতীন্দ্র দাসের পুত্র ও স্বাধীন মিয়া খয়েরপুর-আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিছ মিয়ার পুত্র। ফুলেছা বেগম মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা মৃত আশ্রব আলীর স্ত্রী।

অষ্টগ্রাম থানার ওসি রুহুল আমিন ও মিঠামইন থানার এএসআই দেলোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নেত্রকোনা

নেত্রকোনায় পৃথক স্থানে বজ্রাঘাতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে জেলার মদন উপজেলায় আরাফাত (১০) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু হয়। এর আগে রবিবার দিবাগত রাতে জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় দিদারুল হক (২৫) নামে এক মাদ্রাসাশিক্ষক বজ্রাঘাতে মারা যান।

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাঈম মোহাম্মদ নাহিদ হাসান এবং কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

শিশু আরাফাত মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে এবং দিদারুল হক কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধুনন্দ গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।

স্বজনদের বরাতে জানা গেছে, আরাফাত বাড়ির পাশের একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। প্রতিদিনের মতো সোমবার ভোরে ফজরের নামাজ শেষে মা-বাবাকে বলে মাদ্রাসায় যাচ্ছিল সে। মাদ্রাসার কাছে পৌঁছাতেই হঠাৎ বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আরাফাতের।

অপরদিকে, কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের হাফসা (রা.) মহিলা মাদ্রাসা ও আন নূর ইসলামি একাডেমির শিক্ষক দিদারুল হক স্থানীয় বাজার থেকে রবিবার রাতে মাদ্রাসায় ফিরছিলেন। এ সময় বৃষ্টি শুরু হলে হঠাৎ বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

চাঁদপুর

চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রাঘাতে বিশাখা (৩৫) নামে এক কৃষাণীর মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে উপজেলার কচুয়া উত্তর ইউনিয়নের নাহারা গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক হরিপদ তার স্ত্রী বিশাখাকে নিয়ে বাড়ির পাশে নাহারা মাঠে ধান কাটতে যায়। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি শুরু হলে হঠাৎ বজ্রাঘাতে বিশাখা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বিশাখাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিশাখার কোনও ছেলেসন্তান নাই। স্বামী ও তিন কন্যাসন্তান নিয়ে তাদের অভাবের সংসার। বিশাখার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে এলে স্বজনদের শোকের মাতম শুরু হয়।

মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামে এক চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। 

সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মাখন ওই ইউনিয়নের অহিদাবাদ চা বাগানের মৃত শংকুরা রবি দাসের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার মাখন রবি দাস শ্রীধরপুর গ্রামের আলমাছ মিয়ার জমির ধান চুক্তিতে কেটে দিচ্ছিলেন। সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলে মাখন রবি দাস মারা যান।
বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। পুলিশও এসেছে। লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফনের জন্য নিহতের স্বজনরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’ 

যশোর

যশোরের শার্শা উপজেলার বেড়ি নারায়ণপুর গ্রামে বজ্রাঘাতে আমির হোসেন (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে বাড়ির পাশে ধান গাদা দেওয়ার সময় বজ্রাঘাতে তিনি মারা যান।

আমির ওই গ্রামের স্কুলপাড়ার কোরমান আলীর ছেলে।

যশোরের শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই কৃষক আকাশে মেঘ দেখে কাটা ধান গাদা দিচ্ছিলেন। আকস্মিক বৃষ্টিতে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

বজ্রপাতের সময় সবাইকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার জন্য পরামর্শ দেন ওই কর্মকর্তা।

/কেএইচটি/এমওএফ/এমএএ/
সম্পর্কিত
বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু, এসএসটিএএফ’র উদ্বেগ
যশোরে বজ্রাঘাতে কৃষকের মৃত্যু
চার জেলায় বজ্রাঘাতে ১১ জনের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
রাজস্ব নীতিতে অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়নের অভিযোগ কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের
রাজস্ব নীতিতে অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়নের অভিযোগ কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের
পুলিশ সপ্তাহ শুরু আজ
পুলিশ সপ্তাহ শুরু আজ
দেশের সব পলিটেকনিকে শাটডাউন ঘোষণা
দেশের সব পলিটেকনিকে শাটডাউন ঘোষণা
মোহাম্মদপুরে সেই ব্যবসায়ীর বাসায় আবার গুলি
মোহাম্মদপুরে সেই ব্যবসায়ীর বাসায় আবার গুলি
সর্বাধিক পঠিত
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু