গাজীপুরের শ্রীপুর বন বিভাগের জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বসতবাড়ি ও স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে যৌথ বাহিনী। উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের তালতলী, পেলাইদ এবং সাইটালিয়া গ্রামের ৫৬টি বসতবাড়ি ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে অবৈধ দখলে থাকা বন বিভাগের চার একর ভূমি উদ্ধার করা হয়। যার অনুমানিক মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
বনের জায়গায় ৫৬টি পাকা, আধা পাকা ও সেমি পাকা স্থাপনাসহ বসতবাড়ি নির্মাণ করে দখলকারীরা।
অভিযানের সময় বাসিন্দারা উচ্ছেদ না করার জন্য অনুরোধ জানান এবং কয়েকজন নারীকে আহাজারি করতে দেখা গেছে। শ্রীপুর রেঞ্জের অধীন ওই তিনটি গ্রামের প্রায় চার হাজার পরিবার অবৈধভাবে বনের জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় যৌথ বাহিনী উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এ সময় ভুক্তভোগীরা জানান, ১০ যুগেরও বেশি সময় ধরে তারা সেখানে বসবাস করে আসছিলেন। তারা বলেন, ‘আমাদের ভিটামাটি, স্বপ্ন কেড়ে নেবেন না। আমরা বাংলাদেশেরই নাগরিক। আমরা গৃহহীন হতে চাই না, আমরা বাঁচতে চাই। আমরা অসহায়, আমরা ভূমিহীন, আমাদের বাঁচান।’
ষাটোর্ধ আজিম উদ্দিন, নুরুল ইসলাম, শারফুল ইসলাম, সখিনা বেগম (৭০), গোলেছা (৫০) এবং এলাচি বেগম (৬৫) জানায়, বংশপরম্পরায় বন বিভাগের জায়গায় মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। দীর্ঘদিনেও তাদের জীবন মানের কোনও উন্নতি না হওয়ায় তারা অন্যত্র মাথা গোঁজার ঠাঁয় করতে পারেননি। এরই মধ্যে ওইসব এলাকায় জীবনধারণের জন্য দীনমজুর, ক্ষুদে ব্যবসায়ী, হকার, ফেরিওয়ালাসহ নানা পেশায় যুক্ত হয়ে তারা কোনোরকমে জীবনযাপন করছেন। তাদের বসবাসের জন্য ঠাঁয় করে দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
ষাটোর্ধ নারী সখিনা বানু বলেন, ‘আমাদের চোখের জলের কোনও মূল্য নেই। স্বামীর ভিটেমাটি থেকে আমাদের আজ উচ্ছেদ করে দিলো। এই বৃদ্ধ বয়সে কই যাবো। শ্বশুরের পর স্বামী মরলো এই ভিটায়। শেষ বয়সে এসে এমন হলো কেন? আমরা তো বন বিভাগের কোনও গাছপালা কেটে বসতবাড়ি নির্মাণ করিনি। তাহলে আমাদের ওপর এমন জুলুম কেন?’
শ্রীপুর ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘বনের জমি উদ্ধারের বাসিন্দাদের আগেই স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ এবং লিফলেট বিতরণ করা হয়েছিল। সর্বশেষ একাধিকবার মাইকিংও করা হয়। অনেকেই স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। কেউ কেউ বসতবাড়ি থেকে আংশিক স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন।’
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার এবং বন বিভাগের পাঁচ শতাধিক সদস্য উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেন।