বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীনকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অপসারণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্ট-দোসরদের পুনর্বাসন করায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে বৃহৎ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ড. মো. মুহসিন উদ্দীন ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অধ্যাপক।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর সদর রোডে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সুধীজনের উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন সরকারি বিএম কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজা শরীফ, বরিশালের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে বক্তব্য দেন কবি ও গবেষক সাইফুল আহসান বুলবুল, কবি আসমা চৌধুরী, কবি জয়নাল আবেদীনসহ অন্যরা।
বক্তারা বলেন, ‘সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অপসারণ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুহসিন উদ্দীনকে হেয় করা হয়েছে। তিনি সবার কাছে সম্মানিত হলেও তাকে বাদ দিয়ে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসিত করা হচ্ছে। তাই অনতিবিলম্বে মুহসিন উদ্দীনকে তার দায়িত্বে পুনর্বহাল করতে হবে। অন্যথায় বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অধ্যাপক যিনি জুলাই আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে জুলাই বিপ্লবের ভিডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার ঘটনায়। সেখানে স্পষ্ট শোনা গেছে, ছাত্রদের নিরপত্তা নিশ্চিত হওয়া নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অথচ তৎকালীন ফ্যাসিবাদের দোসররাই তাকে “স্বৈরাচারের দোসর” আখ্যা দিয়ে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
এ সময় একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন এবং ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে উদ্ভূত। তিনি নিজেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন, তখন তাকে অব্যাহতি দেওয়া যেতো। এখন এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য নেওয়া হয়েছে।’
সরকারি বিএম কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যেকোনও যৌক্তিক আন্দোলনে কিংবা বিপদে শিক্ষকরা তাদের পাশে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। যার অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন ড. মুহসিন উদ্দীন। গোপন যে ভিডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে, সেখানে তা স্পষ্ট হয়েছে যে শেষ মুহূর্তে ৪ আগস্টও তিনি ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানে তাকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে সম্মানহানিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’ এর প্রতিবাদ জানাতে এই প্রতিবাদী মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বরিশালের সাহিত্যিক ও গবেষক সাইফুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘বিগত পনেরো বছর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একমাত্র অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন ফ্যাসিবাদের দ্বারা নির্যাতিত ও জাতীয়তাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে কোণঠাসা ছিলেন। অথচ তিনি একজন মুক্তমনা সুসাহিত্যিক। ওই সময় তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি জীবনানন্দ গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করেছেন। তিনি একমাত্র শিক্ষক যার কাছে দলমত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীরা সবরকম সহযোগিতা পেতো। তাকে বিগত সময়ে জামায়াত-শিবিরের ট্যাগ দেওয়া হয়েছে, আর এখন তাকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলার চেষ্টা চলছে। এটা এ জন্য যে তিনিই এখন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবার যোগ্য। তাই যে কোনও কৌশলে তাকে সরিয়ে দিতে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।’
উল্লেখ্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রুপিং ও লবিংয়ের কারণে এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে ড. মুহসিন উদ্দীনকে ফ্যাসিস্টের দোসর আখ্যা দিয়ে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর থেকে ক্যাম্পাসে শুরু হয় আন্দোলন।