কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় এক বিএনপি নেতার কাছে মাদক ও অস্ত্র থাকার দাবি করে আকস্মিক দেহ তল্লাশি করেছে পুলিশ। তবে ওই বিএনপি নেতার কাছে কিছুই পাওয়া যায়নি। রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে উপজেলার দাঁতভাঙা ইউনিয়নের দাঁতভাঙা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তবে ওই বিএনপি নেতার দাবি, তল্লাশির নিয়ম না মেনে আনুষ্ঠানিক কোনও সাক্ষীর উপস্থিতি ছাড়াই এভাবে দেহ তল্লাশি করে পুলিশ মূলত তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। বাজারে লোকজনের সামনে আকস্মিক পুলিশের এমন আচরণে তার সম্মানহানি হয়েছে বলেও অভিযোগ ওই বিএনপি নেতার।
ওই বিএনপি নেতার নাম মোখলেছুর রহমান (৪২)। তিনি দাঁতভাঙা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। পেশায় সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী। তিনি জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সফিকুল ইসলাম বেবুর নিকটাত্মীয়।
ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে আমি দাঁতভাঙা বাজারে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ পুলিশের এএসআই মুনির এসে আমাকে বলে ‘‘আপনাকে সার্চ করবো। আমাদের কাছে খবর আছে, আপনার কাছে মাদক ও অস্ত্র আছে।’’ এই বলে আমাকে অন্ধকারে নিয়ে যেতে চায়। তখন আমি বলি যে, না আমি কোথাও যাবো না। এখানেই সার্চ করেন। তখন আমাকে সার্চ করে। কিন্তু কিছুই পায়নি। এ সময় আমার পরিচিতজন এসে এভাবে সার্চ করার প্রতিবাদ জানায়। রৌমারী থানার ওসি বাজারে উপস্থিত ছিলেন।’
পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ তুলে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক। এলাকায় আমার একটা সম্মান আছে। এভাবে মাদক আর অস্ত্র রাখার অভিযোগ তুলে পুলিশ আকস্মিক আমাকে সার্চ করায় আমি অসম্মানিত বোধ করেছি। আমি বিএনপির রাজনীতি করি। পুলিশ মূলত আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টায় এমনটা করেছে। আমি তাদের কথায় অন্ধকারে সরে গেলেই আমাকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দিতো।’
একই অভিযোগ ওই বিএনপি নেতার বড় ভাই ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি সহিদুর রহমান বিএসসির। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারে কারও মাদক কিংবা অস্ত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি ষড়যন্ত্র। পুলিশ টাকার বিনিময়ে ফাঁসানোর উদ্দেশে এমনটা করেছে। পাশে ওসি ছিলেন। স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে ওসি এগিয়ে এসে জানান যে, সোর্স হয়তো ভুল তথ্য দিয়েছে। সোর্স কেন এমন তথ্য দিলো তা তারা যাচাই করার আশ্বাস দিয়ে চলে গেছেন। কিন্তু মাদক আর অস্ত্র রাখার অভিযোগ তুলে এভাবে তল্লাশি করায় আমাদের সম্মানহানি হয়েছে। ’
আইনজীবীরা বলছেন, পুলিশ চাইলেই যে কাউকে তল্লাশি করতে পারে। কিন্তু সেটি একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করতে হবে। নিয়ম অনুসরণ না করে পুলিশ যেনতেনভাবে তল্লাশি করতে পারে না।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুর রহমান দুলু বলেন, ‘ পুলিশ যে কাউকে তল্লাশি করতে পারে। তবে এজন্য নিরপেক্ষ দুজন সাক্ষীর সম্মুখে তল্লাশি করতে হবে এবং তল্লাশির আগে ওই পুলিশ সদস্যকে ক্লিন হ্যান্ড হতে হবে। এজন্য উপস্থিত সাক্ষী কিংবা তল্লাশির জন্য টার্গেট ব্যক্তি আগে ওই পুলিশ সদস্যকে তল্লাশি করবেন। এটিই পুলিশ রেগুলেশন্স ১৯৪৩-এর ২৮০ রেগুলেশন অনুসারে তল্লাশির বিধান।’
তবে ওসি লুৎফর রহমান দাবি করেছেন, পুলিশ এভাবে তল্লাশি করতে পারে। এতে নিয়মের কোনও ব্যত্যয় হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা মাদক অভিযানে ছিলাম। আমাদের সোর্স বলেছিল ওই ব্যক্তির কাছে মাদক থাকতে পারে। পরে প্রকাশ্য স্থানে তাকে সার্চ করা হয়েছে। কিছু পাওয়া যায়নি। তারা অপমান বোধ করেছে যে, “আমাদের সার্চ করেছে।” তাকে আমরা বলেছি, যে ইনফরমেশন দিয়েছে সে হয়তো ঠিক দেয়নি।’
পুলিশের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাকে ফাঁসানোর অভিযোগ প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘এটি সঠিক নয়। পুলিশ তো সোর্সের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধার করে। ফাঁসানোর পাঁয়তারা করবে কেন?’