মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লেবুর দেশব্যাপী চাহিদা থাকলেও রমজানের শুরুতেই বাজারে দাম বেড়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি টিলা লেবু উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার আগে বাগান মালিকরা লেবু বিক্রি না করে রোজা উপলক্ষে বিক্রি করছেন বেশি দামে। তবে লেবুচাষিরা জানান, বাগানে লেবুর উৎপাদন না থাকায় বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব কাগজি লেবু।
রবিবার মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল নতুনবাজার লেবুর আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, লেবুর দাম অনেক বেশি। আগে যেখানে প্রতিটি লেবু বিক্রি হতো ৮ থেকে ১০ টাকা দরে, এখন দাম বেড়ে বড় সাইজের লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। খুচরা বাজারে মানভেদে এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ১২০ টাকায়।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবুর মৌসুম হচ্ছে বর্ষাকাল। এ সময় প্রচুর লেবু উৎপাদিত হয়। তখন দামও থাকে কম। শুকনো মৌসুমে লেবুর উৎপাদন প্রাকৃতিক কারণেই কমে যায়। যারা গাছের বাড়তি যত্ন নেন, তাদের বাগানে সব সময় লেবু থাকে। তবে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এমন পরিস্থিতিতে রোজায় লেবুর চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে।
শ্রীমঙ্গল এলাকার লেবুচাষি মালেক মিয়া জানান, রোজার আগে ৪ হাজার লেবু বিক্রি করেছি ৮০ হাজার টাকায়। যেখানে প্রতিটি লেবুর দাম পড়েছে ২০ টাকা । সপ্তাহখানেক আগেও সমপরিমাণ লেবু বিক্রি করেছি প্রতিটি ১৫ টাকায়।
আরেক লেবুচাষি শামসুল ইসলাম বলেন, ‘মাঘ মাস থেকেই লেবুর দাম বাড়ছে। এখন গাছে লেবু খুবই কম। খুব কষ্ট করে গাছে লেবু টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। এতে লেবুর দাম কিছুটা বেড়েছে। বৈশাখ মাস থেকে লেবুর সরবরাহ বাড়বে। তখন দামও কমে যাবে।’
খুচরা লেবু ব্যবসায়ী মো. দুলাল মিয়া বলেন, ‘রোজার আগে থেকেই লেবুর সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। বাজারে বর্তমানে লেবুর সরবরাহ কম। যার কারণে লেবুর দাম বাড়তি।’
পাইকারি ক্রেতা বাবুল মিয়া, ফখরুল ইসলাম জানান, রমজান মাসে নানা ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেবুর দামও। রোজার শুরুতে খুচরা বাজারে প্রতিটি ছোট আকারের লেবু ৭ থেকে ১০ টাকা, মাঝারি ১২-১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় সাইজ ১৫-২০ টাকা এবং ২৫ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে। অথচ রোজার আগে এই লেবুর দাম ছিল প্রকারভেদে ৫ থেকে ৭ টাকা এবং ১০ টাকা দরে বিক্রি হতো।
লেবু কিনতে আসা আরেক ক্রেতা রকিব মিয়া জানান, ৮০ টাকা দিয়ে এক হালি লেবু কিনেছেন। অথচ কিছুদিন আগেও একই লেবু ৩০ টাকা হালি কিনেছিলেন।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাসামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন লেবুর মৌসুম নয়। বর্তমানে যে লেবু পাওয়া যাচ্ছে, রস একটু কম। চাহিদার চেয়ে জোগান কম, এ জন্য দাম বেড়েছে।’
লেবু বাগান মালিক সাইদুল ইসলাম সাহেদ বলেন, ‘আমার লেবু বাগানে এবার লেবু আসেনি। শুকনো মৌসুমে পাহাড়ি টিলায় পানির ব্যবস্থা না থাকায় লেবু গাছে ফল আসেনি।’ লেবুর দাম বাড়তি নিয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলের লেবুর চাহিদা দেশব্যাপী। কারণ শ্রীমঙ্গলের লেবুর গুণগত মান ভালো, রস বেশি। লেবুগুলো ৫-৬ দিন ঘরে রাখলেও রং নষ্ট হবে না, যার ফলে লেবুর চাহিদা বেশি থাকায় রোজায় দাম একটু বাড়তি।’