শরীয়তপুরের জাজিরায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযান চলাকালে মিলন বেপারি নামে এক মুদি ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবারের দাবি, ডিবির মারধরের শিকার হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। আর পুলিশ বলছে আতঙ্কিত হয়ে মাটিতে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ।
ব্যবসায়ী মিলন জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকার মৃত আমজাদ বেপারির ছেলে। তিনি তিন ছেলে দুই মেয়ের বাবা।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, শনিবার রাতে জাজিরা পদ্মা সেতু এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালান জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক নওশের আলীসহ ৮ জন সদস্য। অভিযান চলাকালে মোজাম্মেল নামে এক ব্যক্তিকে গাঁজাসহ আটক করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী উপজেলার নাওডোবা এলাকার কালু বেপারী কান্দি এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী জামাল বেপারির বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় জামালের প্রতিবেশী ও মামা মিলন বেপারি আতঙ্কিত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। তবে পরিবারের অভিযোগ, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাকে ঘর থেকে বের করে মারধর চালানো হলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মিলন বেপারির স্ত্রী রেণু বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘ডিবির লোক পরিচয় দিয়ে আমার স্বামীকে ডেকে বাইরে নিয়ে আসে। আর দুই জন ঘরে ঢুকে আমাদের বের হতে না করেন। পরে আমি দরজা দিয়ে উঁকি দিলে তারা আমাকে বলেন, “একজন লোক অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে তাড়াতাড়ি এসে দেখেন।” পরে দৌড়ে গিয়ে দেখতে পাই, আমার স্বামী মুখে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে লম্বা লম্বা ছয় জন লোক দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের বলি, “স্যার আমার স্বামীকে হাসপাতালে নিতে হবে, তিনি নিঃশ্বাস নিচ্ছেন না।” বলার পর তারা তিনটি মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যায়। আমার ছোট ছোট পাঁচটি সন্তান। কে দেখবে, কে খাওয়াবে? আমি ওদের নিয়ে কোথায় যাবো? আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
নিহত মিলন বেপারির ছেলে আল-আমিন বলেন, ‘৮-১০ জন লোক ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাকে ঘর থেকে বের করে চেক করেছে। পরে দেখি তারা বাবাকে মারধর করছে। মাথায়, বুকে, পিঠে ঘুষি দিচ্ছে। বাবা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। দৌড়ে গিয়ে দেখি বাবা কোনও নিশ্বাস নিচ্ছে না। আমার মা যখন বলে, তোর বাবা আর নেই, তখন ডিবি স্যারেরা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান।’
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আকরাম এলাহী বলেন, ‘মরদেহটির ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।’
জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবু বকর মাতুব্বর ডিবির নির্যাতনের মারা যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘হাসপাতালে যে মারা গেছে, তার পরিবার যে কথা বলছে, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবে। আর আমাদের ফোর্সের কোনও অপরাধ থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
এ বিষয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদি কোনও অফিসারের অভিযানে অসদাচরণ থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’