ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের পাশাপাশি আবরার ফাহাদের মতো পিটিয়ে মেরে ফেলার হুমকির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর দেওয়া একটি লিখিত অভিযোগপত্রে হুমকির বিষয়টি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ রকি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন– মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তর বিশ্বাস, একই বিভাগের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন নাবিল এবং তার কয়েকজন সহযোগী।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুরের লেবুবাগান এলাকার ‘বিশ্বাস ম্যানসন’ ছাত্রাবাসের ২০৪ নম্বর কক্ষে থাকেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত মানসিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন তিনি। অভিযুক্ত একই ছাত্রাবাসের ২০১ নম্বর কক্ষের নাজমুল হোসেন নাবিল এবং ২০৫ নম্বর কক্ষের অন্তর বিশ্বাস রাত পৌনে ১২টায় ভুক্তভোগীর কক্ষে প্রবেশ করেন। শুরুতেই অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী তাকে নানারকম বিব্রতকর প্রশ্ন করেন। ফলে ভুক্তভোগী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হন।
লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী জানা গেছে, অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘তোকে গেস্টরুমে নিয়ে যাবো, গেস্টরুমে নিয়ে গিয়ে তোকে আদর আপ্যায়ন করবো। শেষবারের মতো তোর মাকে কল দে, কল দিয়ে বল, “আর কোনোদিন দেখা নাও হতে পারে। আমি কোনও ভুল করলে আমাকে মাফ করে দিও।” ’
এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা বলেন, ‘আবরার ফাহাদকে কীভাবে মেরে ফেলা হয়েছিল জানিস?’ উত্তরে ভুক্তভোগী বলেন, ‘জি ভাই পিটিয়ে মারা হয়েছিল।’ তারপর অভিযুক্তরা বলেন, ‘তোকে এভাবে মারলে তখন কী করবি?’ এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চুপ থাকেন।
এরপর অভিযুক্তরা রকিকে হুমকি দিয়ে একাধিকবার হলের গেস্টরুমে যেতে বলেন। শেষে তারা ভুক্তভোগী মোহাম্মদ রকিকে বলেন, ‘তোর রুমমেটদের সেমিস্টার ফাইনাল ৭ তারিখে শেষ হবে। ৮ তারিখ থেকে রাতে তোর সঙ্গে আমরা পার্টি দেবো।’ এরপর তারা আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে কক্ষ থেকে বের হয়ে যান।
এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন মোহাম্মদ রকি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর অফিসে দুই পক্ষকে ডাকা হয়। এ সময় দুই সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দীন এবং মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মশিহুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত মার্কেটিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন নাবিল বলেন, ‘গতকাল আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভাগের বড় ভাই ওই ছেলের রুমে নিয়ে যায়। যখন আমি রুমে যাই, তখন আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই তার (রকি) সঙ্গে মজা করে। আমিও ছিলাম পেছনে। কিন্তু আমি সেরকম ইনফ্লুয়েন্স করিনি। মারা বা কোনও অত্যাচার করিনি। আমি তাকে বলে এসেছি, “তোমরা ফ্লোরে একসঙ্গে আছ, মিলেমিশে থাকবে। রুমে আসবে, আড্ডা দেবে। তোমার কোনও সমস্যা হলে আমাকে নক করতে পারো।” ’
আবরার ফাহাদের মতো হত্যার হুমকি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আমরা উদাহরণ হিসেবে বলেছি। আমরা বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় এখন সেরকম নেই যে আবরার ফাহাদের মতো হবে। তার সঙ্গে এমন হলে আমাদের জানাতে বলেছি, কিন্তু সে বিষয়টি অন্যভাবে নিয়েছে।’
অভিযুক্ত আরেক শিক্ষার্থী মো. অন্তর বিশ্বাস বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে খুবই নরমালি কথা বলি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল তার সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক তৈরি করা। কিন্তু ব্যাপারটা এতদূরে চলে যাবে আমি বুঝতে পারিনি। ওই শিক্ষার্থীকে আমরা হুমকি দিয়েছি– এমনভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে, এটি ভুল। আমি তাকে বলেছিলাম, আবরার ফাহাদের সঙ্গে যেটা ঘটেছে ওটা র্যাগিং, কিন্তু তোমার সঙ্গে যেমনভাবে কথাবার্তা হচ্ছে এটাকে তুমি র্যাগিং হিসেবে নিও না।’
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। কারণ, একজন নতুন শিক্ষার্থীকে যেভাবে র্যাগিং দেওয়া হয়েছে, সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা শিক্ষক হিসেবে এই বিষয়গুলোকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দিতে পারি না। অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা আমরা করবো। অভিযোগ ও স্বীকারোক্তির তথ্যগুলো আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিভাগে পাঠাবো। বিভাগের একাডেমিক কমিটির একটা সুপারিশমালা তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে দেবে। সেই অনুযায়ী শৃঙ্খলা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।’