নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় এক নারীকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে উল্লেখ করছেন অনেকেই। তবে বিষয়টি সাম্প্রদায়িক কিছু না বলে নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী নারীর বাবা ও স্থানীয়রা।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ডুমুরুয়া ইউনিয়নের মইশাই গ্রামে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ঘটনাটি ঘটে।
ওই নারীর বাবা ও গ্রামবাসী জানিয়েছেন, ভিডিওতে দেখা ঘটনাটি সত্য। তবে সেটা সাম্প্রদায়িক হামলা বা সহিংসতার ঘটনা ছিল না। ওই নারীকে অপহরণের চেষ্টা করেছিলেন তার স্বামী। তবে স্থানীয়দের বাধার মুখে তিনি তা পারেননি।
ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, কয়েক জন ব্যক্তি জোর করে রাস্তায় থামানো একটি মাইক্রোবাসে একজন নারীকে ওঠানোর চেষ্টা করছেন।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাম্পত্য বিরোধের জেরে স্বামীর ঘর থেকে বাবার বাড়িতে চলে এসেছিলেন ওই নারী। তাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তার স্বামীসহ কয়েকজন ব্যক্তি। তখন ওই নারীর চিৎকার শুনে গ্রামবাসী এগিয়ে আসেন। তারা মাইক্রোবাসটি ভাঙচুর করেন। এ সময় ওই নারীর স্বামীসহ তিনজনকে তারা আটক করেন।
আটক ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানায় গ্রামবাসী।
ওই নারীর বাবা বলেন, তার মেয়ের প্রায় চার বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর মেয়ের স্বামী তার কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। তিনি ৩ লাখ টাকা যৌতুক দিলেও তার মেয়ের ওপর স্বামী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলতে থাকে। দুই বছর আগে ওই নারী স্বামীর ঘর থেকে চলে আসেন। এরপর এক সালিস বৈঠকে দুজনের বিবাহবিচ্ছেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
বিচ্ছেদ কার্যকরের আগে ওই নারীকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধের কথা ছিল বলে জানান তাঁর বাবা। তিনি বলেন, টাকা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানানোর পর তার মেয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।
নারীর বাবা আরও বলেন, মামলায় হাজিরা দিতে এসে দেড় মাস আগেও একবার স্বামীসহ কয়েকজন আদালত চত্বর থেকে তা র মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা করেছিলেন। তখন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে তাঁর মেয়ের রক্ষা হয়। সর্বশেষ গতকালও দুটি মাইক্রোবাসে করে ১৭-১৮ জনের একটি দল তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা করেন।
সেনবাগ উপজেলার ডুমুরুয়া ইউনিয়নের পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লিটন চন্দ্র পাল বলেন, এটি একটি দাম্পত্য কলহকে ঘিরে সংঘটিত ঘটনা। এলাকার সব ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে অপহরণের চেষ্টাকারীদের প্রতিহত করেছেন। এ সময় তিনজনকে আটক করা সম্ভব হলেও বাকিরা পালিয়ে গেছেন।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। পুলিশ কর্মবিরতিতে থাকায় তাদের কোন দল সেখানে যাননি। তবে, শুনেছেন আটক ব্যক্তিরা সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছে।