কুষ্টিয়ায় লালন অনুসারী বৃদ্ধা চায়না বেগমের (৮০) বাড়িঘর ভাঙচুর ও উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ার মরমি সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের মাজারের প্রধান ফটকের সামনে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে লালনের ভক্ত-অনুসারীরা অংশ নেন। তারা চায়না বেগমের ঘর ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি এবং পুনরায় একই স্থানে ওই ঘর নির্মাণের দাবি জানান।
মানববন্ধনে চায়না বেগমের বোন ফকির আছিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার বোন যেখানে যেভাবে ছিল, আপনারা সেখানে সেভাবেই বসবাসের ব্যবস্থা করে দিন। যারা আমার বোনের ঘর ভেঙেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’
লালনভক্ত বৃদ্ধা চায়না বেগম বলেন, ‘সকাল হলে আমি ভিক্ষা করতে যাবো। সারাদিন বেড়াবো। দিনশেষে স্বামীর ভিটায় রান্না করে খাবো। তবু স্বামীর ভিটা ছেড়ে কোথাও যাবো না। আমার ঘর যেভাবে ছিল। আপনারা সেভাবেই করে দিন।’
মানববন্ধনে ফকির আলেক সাঁই বলেন, ‘প্রকৃত মানুষ হতে হলে আগে মনুষ্যত্বের অধিকারী হতে হবে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
প্রসঙ্গত, ২৬ জুন (বুধবার) সকাল ৬টায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের টাকিমারা এলাকায় লালন অনুসারী চায়না বেগমের ঘরটি ভেঙে দেওয়া হয়। চায়না বেগমের ইচ্ছা ছিল, লালন অনুসারী মৃত স্বামীর কবরের পাশে ঘর করে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেবেন। স্বামীর কবরের পাশেই নিজ জমিতে তুলেছিলেন টিনের ঘর। কিন্তু স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গ্রাম্য মাতব্বররা তাকে ওই স্থানে ঘর নির্মাণ করতে নিষেধ করেছিলেন। গত ২৬ জুন সকালে স্থানীয় আরও কয়েকজনকে নিয়ে বৃদ্ধার ঘরটি তারা ভেঙে ফেলেন। চায়না বেগম ঘর ভাঙতে বাধা দিতে গেলে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে তিনি কুষ্টিয়া মডেল থানায় অভিযোগ করেন।
গত শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় থানায় উভয় পক্ষ বৈঠক করে। ওই বৈঠকে চায়না বেগমকে অন্য জায়গায় একটি নতুন ঘর তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্ত উভয়পক্ষ মেনে নেয়। কিন্তু পরে চায়না বেগম অন্য লালনভক্তদের নিয়ে আগের স্থানেই ঘর নির্মাণের দাবি জানাতে থাকেন।
এলাকার মানুষদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চায়না বেগম ও তার স্বামী মৃত গাজির উদ্দিন দুজনেই ছিলেন ফকির লালন সাঁইয়ের অনুসারী। মৃত্যুর পর গাজির উদ্দিনকে মাঠের মধ্যে নিজ জমিতে কবর দেওয়া হয়।