গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত মাদক মামলার আসামি অনেক আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। ঘটনার নয় মাস পরে নামের মিল থাকায় জেল খাটতে হলো একই গ্রামে এক কলেজছাত্রকে!
সোমবার (১৩ মে) ভোরে কলেজছাত্রকে ধরে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে আসামি শনাক্তে ভুল হওয়ার ব্যাপারে পুলিশ বুঝতে পেরে আদালতে একটি প্রতিবেদন দেয়। মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে আদালত ওই কলেজছাত্রকে খালাস দেয়। আর মাদক মামলার প্রকৃত আসামি বর্তমানে ভারতের চেন্নাইয়ে অবস্থান করছে বলে জানা যায়।
জেলখাটা কলেজছাত্রের নাম ইসমাইল হোসেন (২১)। তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভার ফাজিলপুর মহল্লার আবদুল করিম ও মনোয়ারা বেগমের ছেলে। ইসমাইল গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
মাদক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক ওই আসামির নামও ইসমাইল হোসেন (২০)। তার বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার লালবাগ হেলিপ্যাড মহল্লায়। বাবার নামও আবদুল করিম। তার মায়ের নাম মোসা. বেলিয়ারা। আসামি ইসমাইল পেশায় কাঠমিস্ত্রি।
মাদক মামলায় জামিন নেওয়ার পর তিনি ভারতের চেন্নাই গিয়ে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন। মাদক মামলার এই আসামি এবং কলেজছাত্রের নাম এবং তাদের বাবার নামও একই। মহল্লা এবং মায়ের নাম আলাদা হলেও পুলিশ এই কলেজছাত্রকে গ্রেফতার করে হাজতে পাঠানোয় পুলিশের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কলেজছাত্র ইসমাইলের ভাই আব্দুল হাকিম রুবেল জানান, রবিবার (১২ মে) এশার নামাজের সময় গোদাগাড়ী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান তাদের বাড়ি যান। এ সময় তিনি একটি মাদক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখিয়ে তার ভাই ইসমাইল হোসেনকে ধরে নিয়ে যান।
ওই সময় তারা পুলিশকে জানান, তার ভাইয়ের নামে কোনও মাদক মামলা নেই। কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানাও নেই। পুলিশ কোনও কথা না শুনে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত পৌনে ১১টার দিকে গোদাগাড়ীর মাদারপুর জামে মসজিদ মার্কেটের সামনে থেকে ইসমাইল হোসেনকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার করে রাজশাহী জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল। রাতেই তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গোদাগাড়ী থানায় মামলা করেন ডিবির এসআই ইনামুল ইসলাম। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর এক মাস পর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসমাইল হোসেন জামিনে মুক্তি পান। কিছুদিন পর তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজে চেন্নাই চলে যান। তার বাবা ছয় বছর ধরেই সেখানে আছেন।
এই মামলায় কলেজছাত্র ইসমাইলকে গ্রেফতারের বিষয়ে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, ‘এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ওই এলাকায় আগে যে আসামি ইসমাইল থাকতেন সেটি স্থানীয়রাও বলেনি। বাবার নামে মিল থাকায় ভুল করে ওই কলেজছাত্রকে গ্রেফতার করে হাজতে পাঠানো হয়। পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানালে পরের দিনই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ইসমাইলকে আদালত খালাস দিয়েছেন।’