রাজশাহীতে কাপড় ব্যবসায়ীর ছেলেকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের চার সদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। রবিবার (৫ মে) বিকালে তাদের রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
প্রত্যাহার করা চার পুলিশ সদস্য হলেন– গোদাগাড়ী প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ারুল ইসলাম, কনস্টেবল রেজাউল করিম ও মিলন হোসেন।
রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। প্রাথমিকভাবে চার জনকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার তদন্ত চলছে।’
জানা গেছে, গত শনিবার (৪ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম গ্রাম থেকে ওই কিশোরকে তুলে নিয়ে যান কয়েক ব্যক্তি। ওই কিশোরের বাড়ি গোগ্রাম গ্রামে। তার নাম সোহানুর রহমান সোহান। তার বাবা মো. মুর্তজা আলী একজন কাপড় ব্যবসায়ী।
ওই কিশোর এবং স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাত ৮টার দিকে সোহানুর রহমান তার বাবার কাপড়ের দোকান বন্ধ করে। পরে সে তার দুই বন্ধুর সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। সে সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে চার জন তাদের সামনে আসেন। তারা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তিন জনের মোবাইল ফোন নিয়ে নেন। এরপর তারা জোর করে সোহানকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে চলে যান। রাত ৯টার দিকে তার হাতে হাতকড়া পরানো হয়। এরপর তাকে প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পাশে পদ্মা নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এ সময় তুলে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা সোহানকে বলেন, ‘তোর বাপকে ফোন দিয়ে টাকা আনতে বল। না হলে মাদক মামলায় চালান দিয়ে দেবো।’
সে সময় সোহানের ফোনে তার মা-বাবার নম্বর থেকে বারবার কল আসছিল। কিন্তু তাকে তার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে দেননি তুলে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বসন্তপুরে ফাঁকা রাস্তার পাশে নামিয়ে দিলে ওই কিশোর একা গোগ্রাম বাজারে চলে যায়। সোহানুর রহমান মুঠোফোনে বলে, ‘তাদের আচরণ একেবারে পুলিশের মতো। তবে পরনে পুলিশের কোনও পোশাক ছিল না। বারবার ফোন আসছিল আর “স্যার” “স্যার” বলছিলেন তারা।’ তাদের একজনের হাতে থাকা হাতকড়া তাকে পরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তারা দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে গাড়ি এনে থানায় নিয়ে চালান দিয়ে দেবেন বলেও তারা সোহানকে হুমকি দেন। সে ভয় না পেয়ে তাদের সঙ্গে থানায় যেতে চায়। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সোহান আরও জানায়, ওই চার জন তার মোবাইল ফোনের বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর নিয়ে তার সামনেই তিন হাজারের মতো টাকা তুলে নেন। তাকে ছেড়ে দেওয়ার আগেই দুজন পুলিশ সদস্য সেখান থেকে চলে যান। বাকি দুজন তাকে ফাঁকা রাস্তায় নামিয়ে দেন।
এদিকে, সোহানুর রহমানকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় পরিবার তাকে খুঁজতে থাকে। থানা-পুলিশকেও ফোন করা হয়। এ সময় এএসআই আনোয়ারুলকে সাদাপোশাকে গোগ্রাম বাজারে দেখতে পান স্থানীয়রা। স্থানীয় লোকজন তার কাছে সোহানের বিষয়ে জানতে চান। একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাকে অবরুদ্ধ করেন।
পরে খবর পেয়ে প্রেমতলী তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসমান গনি অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়েই স্থানীয় লোকজনকে লাঠিপেটা করেন তিনি। এতে সাত-আট জন আহত হন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন লোকজন। পরে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি আবদুল মতিন ও গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোহেল রানা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে এএসআই আনোয়ারুলকে নিয়ে চলে যান।
সোহানুর রহমানকে তুলে নিয়ে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে এএসআই আনোয়ারুল ইসলাম ফোনে বলেন, ‘এই ঘটনার পর তাকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এর সঙ্গে জড়িত নন। তাকে ফাঁসানো হয়েছে।’
