নিখোঁজের একদিন পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের একটি বেসরকারী হাসপাতাল থেকে আরাফাত নামে এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পরে ময়না তদন্তের জন্য লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে। পরিবারের দাবি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। তারা এঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে ঘটনাটি হত্যা না-কি আত্মহত্যা তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নিহতের স্বজনরা জানান, বুধবার সকালে একটি ফোন আসার পর আরাফাত ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পশ্চিম পাইকপাড়া রাজ্জাক ভবনের বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়। এরপর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের লাভিডা হাসপাতাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা সেখানে ছুটে যান।
পরিবারের অভিযোগ, শহরতলীর ঘাটুরা এলাকার কাজী বাড়ীর মাহিদা আক্তার তৃষা নামের একটি মেয়ের সাথে প্রেমের সর্ম্পক ছিল আরাফাতের। এই সর্ম্পকের জেরে আশুগঞ্জের লালপুর গ্রামের মো. ইয়াছিন, তার বন্ধু আরাফাত এবং প্রেমিকা মাহিদা আক্তার তৃষাকে নিয়ে তাদের পূর্ব পরিচিত আশুগঞ্জ উপজেলার সদরের রেলগেইট এলাকার অপর বন্ধু হজরত এর বাসায় যায়। পরে সেখানে তারা রাত যাপন করে। পরেরদিন দুপুরে ওই বাড়ী থেকে তার ফাঁস লাগানো লাশ উদ্ধার করে বন্ধু ইয়াছিন, হষরত এবং মাহিদা আক্তার তৃষা। এক পর্যায়ে তার লাশ আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের লাভিডা হাসপাতালে নিয়ে আসে।
এঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা মাহিদা আক্তার তৃষা এবং তার দুই বন্ধু ইয়াছিন এবং হষরতকে দায়ি করেন। এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড আখ্যায়িত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন তারা।
নিহতের পিতা হাজী হেলাল মিয়া বলেন, বুধবার সকালে আমার ছেলের মোবাইল ফোনে কল আসার পর সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এর পর থেকে তার মোবাইলে অনেক বার কল দিয়েও কোনও খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে আশুগঞ্জ হাসপাতাল থেকে খবর আসে আমার ছেলে মারা গেছে। আমরা হাসপাতালে গিয়ে তার লাশ নিয়ে আসি। এ ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নিহতের মা হোসনা বেগম বলেন, আমার ছেলের বন্ধুরা তাকে নিয়ে খারাপ বানিয়েছে। তারাই আমার ছেলেকে মারছে। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, আমি তাদের ফাসিঁ চাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নাহিদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বুধবার সকালে ইয়াছিন নামে এক ছেলে তাকে ফোন করে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যায়। পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সৌদ আরবে থাকা রুমান নামে আরেক ছেলের নির্দেষে আরাফাতকে আশুগঞ্জের একটি বাড়ীতে নিয়ে যায়। সেখানে মাহিদা আক্তার তৃষা নামে তার পূর্ব পরিচিত এক মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। বিনিময়ে ২০ লাখ টাকার কাবিন করা হয়। সকালে আবার সেই কাবিনের টাকা ফেরত চায়। পরে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়। কারণ যেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে আত্মহত্যা করার মত কোনও জায়গা নেই। পরে তার লাশ আশুগঞ্জের লাভিডা হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশ খবর পেয়ে লাভিডা হাসপাতালে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্যে হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যা। ময়নাতদন্তের রির্পোটের পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে এ ঘটনায় মাহিদা আক্তার তৃষাকে পুলিশের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।