প্রেম করে বিয়ের পর একটি কোম্পানিতে সাপ্লায়ারের চাকরি। টানাটানি ছিল সংসারে। স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে নিজে ব্যবসা করার পরিকল্পনা আসে মাথায়। কিন্তু টাকা পাবে কোথায়? অবশেষে বাবার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার জোগাড় করতে অপহরণ নাটক করলো ছেলে। নিজের হাত-পা বেঁধে রাস্তার পাশ থেকে বাবাকে ফোন করে টাকা চায় সে। কিছুই না পেয়ে ধরা দিলে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে সব স্বীকার করেছে ওই যুবক।
ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের লালপুর উপজেলায়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার বিকালে হিমেলকে (২০) তার বাবার আইয়ুব আলীর কাছেই হস্তান্তর করেছে পুলিশ। তারা উপজেলার আহম্মেদপুর মহাদেবপাড়ার বাসিন্দা। লালপুর থানার ওসি সেলিম রেজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, দিনমজুর আইযুব আলীর ছেলে হিমেল প্রেম করে বিয়ের পর প্রাণ কোম্পানিতে সাপ্লায়ারের চাকরি নেয়। অপর্যাপ্ত টাকা আয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে সে অভিমান করে বাড়ি ছাড়ে। গত ১৬ জুলাই ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে সে নওগাঁর আত্রাই হয়ে রাণীনগর যায়। এরপর তার নিজ মোবাইল ফোনে কণ্ঠ বিকৃত করে বাবাকে ফোন দেয়। অপহরণকারী সেজে মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা চায়। বাবা দিনমজুর বলে টাকা জোগাড় করতে না পেরে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে ছেলেকে উদ্ধারের অনুরোধ করেন। এরপর মাঠে নামে পুলিশ। তার নম্বরে যোগাযোগ করে মুক্তিপণের টাকা কমানোর ছলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে ঘটনা অনুমান করা হয়। এরপর এক পর্যায়ে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। টাকা নিতে সে রাণীনগর থেকে নাটোরে আসে। শহরের এক হোটেলে উঠে একজনকে ৫ শ টাকা দিয়ে নিজ হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটানোর ছবি তোলে। এরপর সেই ছবি সে বাড়ির মোবাইলে পাঠায়।
অবশেষে কোনও টাকা না পেয়ে রবিবার রাতে সে তার বাবাকে ফোন দিয়ে অপহরণকারী সেজে বলে, আপনার ছেলেকে রাতে নান্টুর আম বাগানে পাবেন। রাত ১১টার দিকে সে নাটোর থেকে দাশুরিয়া গামী একটি পিকআপ ৭ শ টাকায় ভাড়া করে। উপজেলার চাঁদপুর এলাকায় পৌঁছে সে গাড়ি থেকে নামে। এরপর নিজ হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে বাবাকে ফোন দেয়।
পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন রাস্তা থেকে তাকে নিয়ে অসুস্থ ভেবে চিকিৎসার জন্য প্রথমে গোপালপুর মুক্তার জেনারেল হাসপাতাল ও পরে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। খবর পেয়ে সোমবার সকালে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে হিমেল সবই স্বীকার করেছে। পরে বিকালে তাকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।