নীলফামারীর ছয় উপজেলায় কমছে না ক্ষতিকর তামাকের চাষ। বেশি লাভের আশায় ধান,গম,ডালের পরিবর্তে জমিতে তামাক চাষ করছেন কৃষকরা। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন টোব্যাকো কোম্পানি অগ্রিম টাকা ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে ক্ষতিকর তামাক চাষে।
তামাক চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা জেনেও বেশি লাভের আশায় তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছেন তারা। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে কৃষকসহ ব্যবসায়ীরা ভুগছেন নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায়। নীলফামারী কৃষি নির্ভর হওয়ায় ধান, পাট, গম, ভুট্টা, সরিষা,মুসুর ডাল, আদা,রসুন পেঁয়াজ ও শাক-সবজির ব্যাপক ফলন হলেও গত কয়েক বছর ধরে কৃষকরা বিষাক্ত তামাক চাষ করছেন
জানা গেছে,ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো কোম্পানিসহ বিভিন্ন সিগারেট ও জর্দা কোম্পানি তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে কৃষকদের অগ্রিম টাকা,বীজ, সার প্রদান করে বিভিন্নভাবে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছে। সরকার যখন চেষ্টা করছে তামাক চাষের পরিবর্তে অন্য ফসল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে তখনই ট্যোবাকো কোম্পানিগুলো অধিক মুনাফা লাভের আশায় কৃষকদের তামাক চাষে উৎসাহিত করছে। এমনকি কোম্পানির শ্রমিকদের দিয়ে রাজপথে মানববন্ধনসহ মিটিং মিছিলের মত কাজও করাচ্ছে তারা।
সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ হাট ও বেরুবন্দ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত তামাক নিয়ে আসছে হাটে অথবা মহাজনের গোডাউনে। সেই বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা তামাকের জাত বা ধরন দেখে দাম নির্ধারণ করে নিচ্ছে। এর মধ্যে জাতি তালিম তামাক দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। আর বিলাতি মতিহার জাতের তামাক দুই হাজার একশ’ থেকে দুই হাজার দুইশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের চড়চড়াবাড়ী গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শরীরের জন্য ক্ষতিকর হলেও তামাক চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। অল্প খরচে কম সময়ে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। বাজারে দামও ভালো। বেচা কেনা নিয়ে কোনও ঝামেলা হয় না।’
জেলার জলঢাকা উপজেলার উত্তর দেশীবাই গ্রামের তামাকচাষী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে তামাক চাষ করি। তবে তামাকের ক্ষতি ও স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা শুনে এবার তামাকের আবাদ কমিয়ে দিয়েছি’।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহসিন রেজা বলেন, ‘বাংলাদেশে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদন বন্ধ করে সরকার বিকল্প কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের তৎপরতায় এবারে গত বছরের তুলনায় তামাক চাষ কমেছে। জেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৩০ হেক্টর। এর মধ্যে চলতি বছরে তামাকের চাষ হয়েছে মাত্র তিন হাজার ৫৬০ হেক্টর। ’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলায় এবারে তিন হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হলেও তা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। কৃষকদের তামাক চাষ থেকে নিরুৎসাহিত করার জন্য উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
সিভিল সার্জন ডা. রনজিৎ কুমার বর্মণ বলেন, ‘তামাকজাত পণ্য ও ধূমপানের কারণে পৃথিবীতে প্রতি বছর ৭১ লাখ মানুষ মারা যায়। ১২ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয় দীর্ঘমেয়াদী রোগে। তাই এসব তামাক চাষে লাগাম টানা উচিত’