‘পুরান চাল নাকি ভাতে বাড়ে’। গান বা পুরোনো ছায়াছবির ক্ষেত্রে বলা হয়- ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’। পুরোনো এবং জনপ্রিয় সংজ্ঞাগুলো কেমন ছিল? দুই একটা উদাহরণ দেওয়া যাক।
-বিয়ে কী?
উত্তর: বিয়ে হচ্ছে জনপ্রিয়তম পাবলিক টয়লেট। যে টয়লেটের ভেতরে থাকে সে যেমন বাইরে আসার জন্য ছটফট করে, যারা বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে তারাও তেমন ভেতরে যাওয়ার জন্য ছটফট করে!
আপনি চাইলে এটাকে ‘দিল্লিকা লাড্ডু’ও বলতে পারেন। খেয়ে পস্তাবেন নাকি না খেয়ে পস্তাবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার। বিয়ের আরও একটা সংজ্ঞা আছে। বিয়ে নাকি সবসময় মোবাইলের মতো। যত অপেক্ষা তত লেটেস্ট মডেল!
- চাপার সংজ্ঞা কী?
- ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সত্যকে কেন্দ্র করিয়া মিথ্যার সমান ব্যাসার্ধ লইয়া যে বৃত্তচাপ আঁকা হয় তাহাকে চাপা বলে!
এখনকার সংজ্ঞাগুলো কেমন, একটু পরখ করে দেখা যাক।
এক. উন্নয়ন ও সংস্কারের সংজ্ঞা কী? এগুলো কতদিন থাকবে?
উত্তর: শাহী এলানের মতো ক্ষমতাসীন সরকারের কার্যক্রমের উপর্যুপরি প্রচারের নাম উন্নয়ন ও সংস্কার। ২০০৯ থেকে ২০২৪-এর আগস্ট পর্যন্ত ছিল উন্নয়ন। এখন সেখানে সংস্কার এসেছে। এসব আসলে অভ্যাসের ব্যাপার। প্রথম প্রথম কানে তালা লাগে। মেজাজ তিরিক্ষি হয়। এরপর শুনতে শুনতে সহ্য হয়ে যায়!
পৃথিবীতে বাংলাদেশের মানুষের সহ্য ক্ষমতার অনেক সুনাম আছে!
দুই. অন্তর্বর্তীর সংজ্ঞা কী?
উত্তর: স্বামীর সাবেক প্রেমিকার ফিরতে চাওয়া আর জানাজানি হওয়ার পর মাঝখানে কোনোরকমে থাকা ঘরের স্ত্রী হচ্ছে অন্তর্বর্তী!
দুই পাগলা ঘোড়ার মতো ঢাকার রাস্তায় প্রতিযোগিতায় উন্মুখ দুই বাসের মধ্যে পিষ্ট হওয়াটা অন্তর্বর্তীদের নিয়তি।
তিন. তাহলে নিয়তির সংজ্ঞা কী?
উত্তর: মনে রাখবেন, দুই হাতি যখন যুদ্ধ করে তখন যেমন দূর্বাঘাস পিষ্ট হয় ঠিক তেমনি দুই হাতি যখন রমণ করে তখনও দূর্বাঘাস পিষ্ট হয়। পিষ্ট হওয়া কিংবা পুড়তে থাকাটাই নিয়তি।
ধরুন এতদিন গ্যাসের ডবল বার্নার চুল্লিতে পুড়ছিলেন। নিয়তি হচ্ছে বিশাল আকারের ইলেকট্রিক্যাল চুল্লি, যা আপনাকে পোড়ানোর জন্য অপেক্ষা করছে।
চার. তাহলে অপেক্ষা ও প্রতীক্ষার সংজ্ঞা কী?
উত্তর: স্বাভাবিক সংজ্ঞা হচ্ছে অফিসের বস আপনাকে সকাল আটটায় ডেকেছেন। আর আপনি তার রুমের সামনে সকাল সাতটা থেকে দাঁড়িয়ে আছেন। এটা অপেক্ষা। অফিস শেষে আপনার প্রেমিকা আপনার সঙ্গে দেখা করবে। অফিস কখন শেষ হবে এই ভাবনাতে সময় পার করাটা প্রতীক্ষা। এবার অস্বাভাবিকটা বলি।
ধরুন ২০২৫-এর ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে এটা অপেক্ষা। আর আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কিংবা শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরবেন, এটা প্রতীক্ষা!
পাঁচ. প্রতিশ্রুতির সংজ্ঞা কী?
উত্তর: নির্বাচনে জেতার জন্য পরিশীলিত মিথ্যার হলফনামা হচ্ছে প্রতিশ্রুতি। সারা পৃথিবীতে এমন কথা প্রচলিত আছে যে রাজনীতিবিদরা সবচেয়ে বেশি মিথ্যা বলেন নির্বাচনের আগে।
জনগণকে সান্ত্বনা দেন সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন নির্বাচনে জিতলে। এই সান্ত্বনা প্রেমিকার সেই সান্ত্বনার মতো- ‘যাহ দুষ্টু এখন না। সব হবে বিয়ের পরে!’
ছয়. গায়ে হলুদের সংজ্ঞা কী?
উত্তর: বিয়ের আগে বর বা কনেকে উজ্জ্বল দেখানোর জন্য মূলত মুখমণ্ডলে হলুদ লাগানোর রেওয়াজকে গায়ে হলুদ বলে। গায়ে হলুদের সময়ে জোর করে হলুদ লাগানো বা হলুদ মারা নিয়ে বিস্তর ঘটনা আছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের ইতিহাসে জনপ্রিয়তম ধারাবাহিক নাটক হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’তে গায়ে হলুদের ইংরেজি করা হয়েছিল ‘বডি টারমারিক’! আসলে বিয়ের আগে গায়ে হলুদ করা হয় কেন?
রসিকজনরা বলেন, রান্নার আগে মাছের গায়ে যে কারণে হলুদ লাগানো হয়, বিয়ের আগেও সেই একই কারণে নাকি বর-কনেকে হলুদ লাগানো হয়ে থাকে!
সাত. চাইনিজ ইন্ডিয়ান আর জাপানি মাল বা জিনিসের একালের সংজ্ঞা কী?
উত্তর: প্রেমিকার সঙ্গে কাটানো সময়টা হচ্ছে ইন্ডিয়ান বা চাইনিজ। সময় কাটানোর ব্যাপ্তিটা বেশিক্ষণের হয় না। ইন্ডিয়ান আর চাইনিজ মালের নাকি এই এক সমস্যা। বেশিক্ষণ টেকে না। বিশ্বাস হচ্ছে না? তিন কিশোর বসে গল্প করছে। একজন ইন্ডিয়ান, একজন চাইনিজ আরেকজন বাংলাদেশি।
ইন্ডিয়ানটা কাঁদছিল আর চাইনিজটা মন খারাপ করে বসেছিল। জিজ্ঞাসা করা হলো কী হয়েছে? ইন্ডিয়ানটা বললো আমার দাদি মারা গেছেন। চাইনিজটা বললো আমার নানিও মারা গেছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাংলাদেশি কিশোর বললো– ইন্ডিয়ান আর চাইনিজ মালের এই এক প্রবলেম। বেশি দিন টেকে না।
আর প্রেমিকার দেওয়া বিরহ হচ্ছে জাপানি। অক্ষয় কোম্পানির মতো। জীবন যায়, বিরহ ভোলা যায় না!
আট. হাল ছেড়ে দেওয়ার সংজ্ঞা কী?
উত্তর: সফলতার কত কাছে এটা বুঝতে না পেরে যেসব ব্যর্থ পুরুষ হতাশ হয়ে পড়েন তাদের কার্যক্রমকে হাল ছেড়ে দেওয়া বলে। এই কারণে সম্ভবত কবীর সুমনের গান জনপ্রিয় হয়- হাল ছেড়ো না বন্ধু তুমি কণ্ঠ ছাড়ো জোরে! মিছিল আর দাম্পত্য কলহে কারও কণ্ঠই নিচে থাকে না!
নয়. ইন্টারভিউয়ের লেটেস্ট সংজ্ঞা কী?
উত্তর: ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে গলার দুটো বোতাম খোলা রাখাটা লেটেস্ট সংজ্ঞা। বিশ্বাস রাখেন, ছেলেরা যতই মেধাবী হোক বোতাম খোলা রাখার কাছে চাকরি হারাবেই!
দশ. সমন্বয়কের সংজ্ঞা কী?
উত্তর: যারা কোটা ও বৈষম্যের বিরোধ মেটাতে গিয়ে মেধাবী হতে পেরেছেন তারা সমন্বয়ক অথবা যাদের নিজেদের মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই তারাই সমন্বয়ক! সব সমন্বয়ক মেধাবী তবে সব মেধাবী সমন্বয়ক নন।
এগারো. আওয়ামী লীগের সংজ্ঞা কী?
উত্তর: বৈষম্যবিরোধীরা যাদের এখন উঠতে বসতে গালি দেয়, কথায় কথায় নিষিদ্ধের হুমকি দেয়, তারা আওয়ামী লীগ। অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত এরা ফ্যাসিস্ট হিসেবে ক্ষমতাসীনদের মুখে মুখে ফিরবে।
বারো. ‘বুদ্ধিমানের কাজ’-এর বর্তমান সংজ্ঞা কী?
উত্তর: চরম বিপর্যয় ও ভয়াবহ ইমেজ সংকট থেকে বাঁচার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনকেই বর্তমানে বুদ্ধিমানের কাজ হিসেবে ভাবা হয়!
তেরো. নির্লজ্জ যন্ত্রের সংজ্ঞা কী? উদাহরণসহ বুঝিয়ে বলো।
উত্তর: যে যন্ত্র হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে, কিন্তু বিশেষ বস্ত্র পরে না বা ব্যবহার করে না তাকে নির্লজ্জ যন্ত্র বলা হয়। একালের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় যন্ত্র কম্পিউটারকেই এটা বলা হয়।
চৌদ্দ. জাতীয় পার্টির বর্তমান সংজ্ঞা কী?
উত্তর: আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বিভাজিত হবার জন্য দীর্ঘতম অনুশীলন করতে থাকা আরেকটি শংকর সংঘ, যেটি ইতোমধ্যে পলিটিক্যাল ক্লাবের রূপ নিয়েছে! ক্ষমতাসীনদের ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ হিসেবে এরা রেকর্ড করেছে। এদের একাংশের নেতা জি.এম. কাদেরের নেতৃত্বে এই অংশ আওয়ামী লীগে পা দিয়ে রেখেছে বলে মনে হচ্ছে। জাতীয় পার্টির আরেক অংশ অন্য কারও নেতৃত্বে বিএনপিতে যাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু করতে পারে।
পনেরো. সংস্কার কী?
উত্তর: যে যেভাবে দেখেন। জামায়াতে ইসলামী ও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় ও যৌক্তিক সময়। বিএনপির কাছে নির্বাচনে পৌঁছাবার দীর্ঘতম পথ!
সংজ্ঞা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলায়। আপনার যদি কোনও সংজ্ঞা ভালো না লাগে আপনি বদলে নিতে পারেন। যেমন– বদলের সংজ্ঞা কী? উত্তর– আপনি কোন বদলের কথা বলছেন? পুলিশ, র্যাব ও আনসারের পোশাক বদল? আমার তো পোশাক তৈরি বা আমদানির কারখানা নেই। পোশাক বদল হলে আমার কী লাভ?
তারচেয়ে দোয়া করেন, যে সরকারই আসুক যেন আমারে তাদের ছায়াতলে রাখে।
স্বভাব আর মানসিকতা সহসা বদলায় না!
লেখক: রম্যলেখক