সম্প্রতি বাংলাদেশের সদ্য ভারতে নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুইটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা মূল ধারার গণমাধ্যমগুলোয় ওই ফোনালাপ শোরগোল ফেলে দিয়েছে। কারণ ওই ফোনালাপে তিনি দাবি করেছেন– তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন আছেন। তার ওই দাবি আইনসম্মত কিনা তা খুঁজে দেখার জন্য সংবিধানের পাতা উল্টানো প্রয়োজন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ ভাগের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের ৫৭/১-এ অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে।
সংবিধানে যা লেখা আছে তা প্রথমে হবহু তুলে ধরছি তারপর এই বিষয়ে দুই-চার কথা বিশ্লেষণ যোগ করা যাবে।
“৫৭। (১) প্রধানমন্ত্রীর পদ শূণ্য হইবে যদি-
(ক) তিনি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন; অথবা
(খ) তিনি সংসদ-সদস্য না থাকেন।
(২) সংসদের সংখ্যাগরিষ্ট সদস্যের সমর্থন হারাইলে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিবেন কিংবা সংসদ ভাংগিয়া দিবার জন্য লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শদান করিবেন এবং তিনি অনুরূপ পরামর্শদান করিলে রাষ্ট্রপতি, অন্য কোন সংসদ-সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ট সদস্যের আস্থাভাজন নহেন এই মর্মে সন্তুষ্ট হইলে, সংসদ ভাংগিয়া দিবেন।
(৩) প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই অযোগ্য করিবে না।”
আন্দোলকারীদের অন্যতম চিন্তক ফরহাদ মজহার দীর্ঘদিন বলে আসছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি আইনি সংকটে আছে। কারণ তারা উকিলি বুদ্ধিতে সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। ফরহাদ মজহার ‘উকিলি বুদ্ধি’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন তা তার বক্তব্য থেকে পরিষ্কার না হলেও বোঝা যায় যে, উচ্চ আদালতের লিখিত মতামতের ভিত্তিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। ওই মতামতকে ফরহাদ মজহার ‘উকিলিবুদ্ধি’ হিসেবে বিবেচনা করছেন।
সংবিধানকে পাস কাটিয়ে উচ্চ আদালতের ওই মতামত সম্পর্কে দৈনিক আজকের পত্রিকায় রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা বলেছেন, “এখনও পর্যন্ত এরা (বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার) সাংবিধানিকভাবে যাচ্ছে। কারণ, এ সরকার (অন্তর্বর্তী) গঠনের আগে ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের লিখিত মতামত নিয়েছেন। আপিল বিভাগ মতামত দিয়েছেন যে দেশের প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছেন, সংসদ সদস্যদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, প্রজাতন্ত্রের নাগরিকরা অরক্ষিত থাকতে পারে না। সব ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে না। সুতরাং, অন্তর্বর্তী সরকার যেটা গঠন করা হচ্ছে সেটা বৈধ।”
সংবিধানের ষষ্ঠভাগের (বিচার বিভাগ) ১ম অনুচ্ছেদের (সুপ্রীম কোর্ট)- সুপ্রীম কোর্টেরউপদেষ্টামূলক এখতিয়ার হচ্ছে ১০৬ অনুচ্ছেদ। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: “যদি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এইরূপ কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যাহা এমন ধরনের ও জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহা হাইলে তিনি প্রশ্নটি আপীল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করিতে পারিবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপর্যুক্ত শুনানীর পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।”
সুপ্রিম কোর্টের উপর্যুক্ত মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ায় এই সরকারের যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তারা আপাতত একটি আইনগত রক্ষাকবচ পেয়েছেন তা বলা যায়। এই সরকার গঠনের সব দায় আইনগতভাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সুপ্রিম কোর্টের ওপর বর্তাচ্ছে। অবশ্য রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের কাছে যে মতামত চেয়েছেন সেখানে তিনি কী উল্লেখ করেছেন তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি, এজন্য এ বিষয়ে খুব বেশি মত দেওয়া সঠিক হবে না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের মতামত থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি সুপ্রিম কোর্টকে লিখেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী পলিয়ে গেছেন এবং সংসদ সদস্যদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাষ্ট্রপতির ওই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট উপর্যুক্ত মত দিয়েছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি কীভাবে জানলেন প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছেন? এমনও তো হতে পারে প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্য করা হয়েছে। সংসদ সদস্যদেরও বাধ্য করা হয়েছে। যার কারণে প্রক্রিয়াটি স্পষ্ট নয়। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট একটি অনুসন্ধানী কমিটি গঠন করলে ভবিষ্যতের সংকট সমাধানে ভালো হতো বলে মনে করি। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাদের হাজির হতে নির্দেশ দিতে পারতেন। উক্ত সময়ের মধ্যে তারা হাজির না হলে তাদের পলাতক বিবেচনা করে উপর্যুক্ত মত প্রকাশ করতে পারতেন। তাহলে এখানে আইনগত ত্রুটি থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতো। সদ্য নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রী ও সদ্য প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিলুপ্ত হওয়া সংসদদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিলে বরং জাতির সামনে স্পষ্ট বার্তা যেত।
এবার সদ্য নির্বাসিত পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রীর দাবি আমলে নেওয়া যাক। তিনি নিজেকে এখনও প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন। যদি আমরা সংবিধান মোতাবেক বিবেচনা করি তাহলে এখনও তিনি প্রধানমন্ত্রী। কারণ দাবি করেছেন যে, তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগ করেননি। যদিও ফাঁস হওয়া ফোনকলটি কতটা সত্য সে বিষয়েও আমাদের সন্দেহ থেকে যায়। এটি সরকার যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দেখতে পারে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার পদত্যাগপত্রও জনসম্মুখে দেখায়নি। কারও পদত্যাগপত্র গণমাধ্যমে প্রকাশ কতটা বৈধ সেটি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তবে যদি এই সংকটকালীন মুহূর্তে বিষয়টি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিশ্চিত করে তাহলে জনগণের মনে কোনও সন্দেহ থাকবে না। তবে সদ্য নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রীর দাবি যে সত্য তা মহামান্য রাষ্ট্রপতির সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চাওয়া থেকেও স্পষ্ট হয়। কারণ রাষ্ট্রপতির নিকট যদি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র থাকতো তাহলে তার সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চাওয়ার প্রয়োজন হতো না। অথবা তিনি পদত্যাগ করেছেন ওই বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের মতামতে উল্লেখ থাকতো। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ও সুপ্রিম কোর্ট উভয়ই সদ্য নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রীকে পলাতক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ওই “পলাতক” শব্দটি ব্যবহার করায় অনেকটা ধরে নেওয়া যায় রাষ্ট্রপতি বা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সদ্য নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র নেই।
সংবিধানের ২য় পরিচ্ছেদের ৫৭ (২) অনুচ্ছেদও এই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি। কারণ প্রধানমন্ত্রী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের সমর্থন হারিয়েছেন বলে কোনও প্রমাণ এখনও আমাদের সামনে আসেনি। অথবা তিনি সংসদ ভেঙ্গে দেবার জন্য লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেননি।
সংবিধানের ২য় পরিচ্ছেদের ৫৭ (৩) অনুচ্ছেদও সদ্য নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রীর দাবির পক্ষে কথা বলছে। ওই অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, “প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই অযোগ্য করিবে না।” এই অনুচ্ছেদ মতে, প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করেও থাকেন তাহলেও তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ না করছেন। সংবিধানে প্রধান উপদেষ্টা বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনও কথা উল্লেখ নেই। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী বলতে অন্য কারোর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণকে বোঝায়। কিন্তু এক্ষেত্রে সংবিধানের ওই নির্দেশও প্রতিপালিত হয়নি।
কিন্তু এগুলো হচ্ছে, আইনের কথা। কিতাবের কথা। বাস্তবে বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। ওই অভ্যুত্থানকারীরা অথবা তাদের সমর্থক বা উত্তরাধিকারীরা যতদিন সরকারে থাকবে ততদিন কিতাবে-আইনে-সংবিধানে কি লেখা আছে তা খুব বেশি আমলযোগ্য হবে না।
১৯৭৯ সালের ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর শাহের পালিয়ে যাবার ঘটনা আমলে নিলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর শাহের শাসনের পতন হয়েছে। শাহ বা তার কোনও উত্তরাধিকারী আর কখনও ক্ষমতায় ফিরতে পারেননি। বিপ্লবীরা বা তাদের উত্তরাধিকারীরাই সরকার পরিচালনা করছেন। সুতরাং শাহের আইনগত বা সাংবিধানিক অধিকার বিষয়ে প্রশ্ন তোলার মতো শক্তি কখনও ইরানে ফেরত আসেনি। ফলে ওই বিষয়টি ইতিহাসের পলিমাটিতে ছাইচাপা পড়ে গেছে।
তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কারণ ফরহাদ মজহারের পরামর্শ মতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করেনি। তারা বর্তমান সংবিধান মেনে বঙ্গভবনে গিয়ে সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছে। তাই তারা আইনগতভাবে সংবিধান রক্ষা করতে চাইলে সংবিধান মতে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী মানতে হবে। শেখ হাসিনা যখনই দাবি করবে তিনি ক্ষমতায় ফিরতে চান তখনই তার হাতে ক্ষমতা ফেরত দিতে তারা আইনগতভাবে ও সংবিধান মতে বাধ্য। অন্যথায় সাংবিধানিক শপথ ভঙ্গের দায় তাদের উপর বর্তাবে।
ধরে নেওয়া যাক, কখনও না কখনও আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় ফিরতে পারে। তখন তো সাংবিধানিক শপথ ভাঙ্গার দায়ে তাদের বিচারও হতে পারে।
সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এখনও বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল। ঢাকা শহরে ৫ আগস্ট যতজন বিপ্লবী অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলতার চেয়ে ওই দলের বেশি সমর্থক এক গোপালগঞ্জ জেলায় রয়েছে, এই বাস্তবতাও মাথায় রাখতে হবে। ঐতিহাসিকভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের এমন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করার অভিজ্ঞতাও আছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপরিবারে নিহত হবার পর তৎকালীন ‘অভ্যুত্থানকারী’রা মনে করেছিল আওয়ামী লীগের রাজনীতির ইতি ঘটেছে। কিন্তু তারা ওই ঘটনার মাত্র এক যুগ পরেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরে আসে। দীর্ঘদিন রাষ্ট্রও শাসন করেছে। তাদের ওই শাসনকালে তারা ১৯৭৫ সালের অভ্যুত্থানকারীদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিও কার্যকর করেছে।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এমন মনে করা ভুল। বরং এখনই নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় ফিরতে না পারলেও সংসদে প্রধান বিরোধী দল হবার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। অন্যদিকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যারা আছেন তাদের অনেকেই সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজের লোক। রাজনৈতিক ভিত্তি তাদের নেই বললেই চলে। নির্বাচনে এদের কারোরই এখনই জয়ের সম্ভবনা নেই। সুতরাং আত্মরক্ষার জন্য বা আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাদেরকে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে, পাশাপাশি সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে। কিন্তু বিএনপি তাদের সব কাজের বৈধতা দেবে এমন কোনও নিশ্চয়তা এখনই পাওয়া যায়নি। আবার বিএনপি বৈধতা দিলেও আওয়ামী লীগ যদি কখনও আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে ওই বৈধতা কি টিকে থাকবে?
ইতিহাসের শিক্ষা আমাদের এমন কথা মনে করিয়ে দেয়। কারণ সামরিক সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের আইনগত সুরক্ষা দিলেও আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তা বাতিল করে। হত্যাকারীদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি কার্যকর করে।
বাংলাদেশের বিভাজনের যে রাজনীতি চলছে তা থেকে জাতিকে স্থায়ীভাবে মুক্ত করতে হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরের সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলা জরুরি।
কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পারত পক্ষে আওয়ামী লীগকে এড়িয়ে চলতে দেখা যাচ্ছে। সরকারের নানাপদ থেকে আওয়ামীপন্থীদের বিতাড়িত করা হচ্ছে। ফলে নানা পরিসরে বিভাজন বাড়ছে।
আমাদের মত হচ্ছে, জাতীয় ঐক্যর স্বার্থে বিভেদের এই রাজনীতির স্থায়ী সমাধান করা দরকার। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলা উচিত বলে মনে করি। আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সব প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সংস্কার করা দরকার। না হয় আজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে সংস্কার করলো কাল অন্য কেউ ক্ষমতায় এসে ‘যে লাউ সেই কদুর’ পথে হাঁটলে সব সংস্কার অর্থহীন হবে।
পরিশেষে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক বিভেদের মাধ্যমে ব্যক্তিগত বা দলীয় ক্ষমতার স্বাদ নেওয়ার জন্য অথবা অন্য কাউকে স্বাদ দিতে সংস্কার করবে নাকি দেশের মঙ্গলে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার চিন্তার মাধ্যমে সংস্কারের পদক্ষেপ নেবে তার উপর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনেকটা নির্ভর করছে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়