X
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ডাক্তাররা হামলা আতঙ্কে থাকবেন নাকি চিকিৎসাসেবা দেবেন?

কাবিল সাদি
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:৪৬আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:৪৬

বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশের সরকারি বেসরকারি চাকরির একটি উন্নত ও কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের জায়গা হচ্ছে ডাক্তারি পেশা। পরিবারের যে সন্তান অথবা ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দ থাকে ডাক্তার হওয়া। আবহমানকাল থেকে এটাই হয়ে আসছে। বর্তমান সময়ে বিসিএস কেন্দ্রিক অন্যান্য পেশাতে ঝোঁক থাকলেও মূলত সামাজিক মর্যাদা এবং একইসঙ্গে সেবামূলক পেশা হিসেবে এর দ্বিতীয়টি নেই বললেই চলে। ফলে গল্প উপন্যাসেও উঠে আসে ডাক্তার বাবু, ডাক্তার বাড়ির মতো নামগুলো। তবে পাশাপাশি এটাও ঠিক, তাদের বিরুদ্ধে সেবামূলক পেশাদারত্ব না থাকারও অভিযোগ শোনা যায়। সম্ভবত এই অভিযোগটি প্রায় সব পেশার ক্ষেত্রেও শোনা যায়। বিশেষ করে হাসপাতাল, ব্যাংক, বিমা বা যেসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি গণমানুষের সেবায় যুক্ত।

কয়েক বছরে প্রায়ই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে উঠে এসেছে ডাক্তারের ওপর হামলা বা হাসপাতালে সদলবলে হামলা করেছেন রোগীর স্বজনরা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাদের এই হামলার পরিধি আইসিইউ, সিসিইউর মতো স্পর্শকাতর জরুরি ইউনিটগুলোও রেহাই পায়নি। কোনও কারণে রোগীর মৃত্যু ঘটলেই এবং সেই রোগীর যদি কেউ রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী হন তাহলে এটি বেশি ঘটে বা ঘটছে। এছাড়াও বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালের কাছে হলেও এমন হামলা এখন নিত্যদিনই ঘটনা। ফলে ডাক্তার, নার্স বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক প্রকার ভয়ের মধ্য দিয়েই তাদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তারা সম্প্রতি তাদের কিছু নিরাপত্তা দাবিসহ বেশ কিছু দাবি-দাওয়ার ক্ষেত্রে কর্মবিরতির মতো অবস্থান আন্দোলনও করেছেন। অবশ্য রোগীদের প্রতি সেবামূলক ও মানবিক জায়গা থেকে খুব দ্রুতই তারা কাজে ফিরেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারা যতই সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করুন না কেন, রোগীর মৃত্যু ঠেকানোর ক্ষমতা তো তাদের নেই, সর্বোচ্চ চেষ্টা শুধু করতে পারেন। এটি নিয়তি হিসেবেও মেনে নিতে হয়, তারা তো স্রষ্টা নন। এর সঙ্গে যুক্ত থাকা রোগীর শারীরিক অবস্থা, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ডায়াগনোসিস উপাদান, বয়স ও চিকিৎসা নেওয়ার আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতাও নির্ভরশীল। হাসপাতালে রোগীর অবহেলা হয় না এটাও বলা যাবে না, কিন্তু রোগী হাসপাতালে এলেই তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হবেন বা বেঁচেই ফিরবেন সেটির নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারে না।

অনেক ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনরা বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি পর্যন্ত ডাক্তারদের সাজেশন দেন এবং কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেও তার দায় ডাক্তারের ওপর বর্তান। এমতাবস্থায় ডাক্তার বা নার্সরা রোগীর জীবনের নিশ্চয়তা দিয়ে কীভাবে তাদের চিকিৎসা কার্য সম্পাদন করবেন এটি একটি ইস্যু, অন্যদিকে এই যে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে তাতে আদৌ ডাক্তার সুচিকিৎসা দেওয়ার মানসিকতা ধারণ করতে পারবেন কিনা সেটাও এখন গুরুত্ব দিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

আমরা প্রায়ই অভিযোগ শুনি, বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালে কোনও ইমার্জেন্সি বা রাজনৈতিক বা কোনও শিক্ষার্থী রোগী সহজে ভর্তি নেন না বা নিতে অনাগ্রহ দেখান। এমনকি এমনও ঘটনা আছে যে রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তির জন্য দৌড়াতে দৌড়াতে শেষ পর্যন্ত রাস্তায় বা অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান। আমার মনে হয় এরও একটা বড় কারণ হলো আতঙ্ক। যদি রোগীটি মারা যায় তাহলে তাদের হাসপাতাল বা ক্লিনিকটি হামলার ঝুঁকি এড়াতে পারবে না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বেঁচে যাওয়া সম্ভব রোগীটিও বিনা চিকিৎসায় মারা যায় এই হামলা সংস্কৃতির ভয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে না পারায়। যদি এভাবেই ডাক্তারদের ওপর হামলা চলতেই থাকে তাহলে হয়তো এই পেশা থেকে মেধাবীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পুলিশ, প্রশাসন ক্যাডারে যাবে অথবা দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাবেন। তখন আবার আমরাই সেই কাজের সমালোচনা করবো।

আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ভালো-মন্দের জায়গা সব ক্ষেত্রেই আছে। যদি তারা ইচ্ছাকৃত ভুল বা অবহেলা করেন সে ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতেই পারে; কিন্তু যেভাবে ডাক্তারকে মারছেন বা মেরেই ফেলতে চাচ্ছেন তাতে ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অন্তত মেধাবীদের হবে না। যারা আসবেন তারা হয়তো একান্ত দায়ে পড়ে বা অন্য পেশায় না ঢুকতে পেরেই আসবেন। তখন সেই গড়পড়তার মেধাবী ডাক্তারের চিকিৎসা কিন্তু আপনাকেই নিতে হবে। দেশের প্রায় মানুষের সক্ষমতা নেই সিঙ্গাপুর বা উন্নত বিশ্ব তো দূরে থাক,পাশের দেশ ভারতে চিকিৎসা নেওয়ার। তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ চিকিৎসা নির্ভরতা আমাদের ডাক্তাররাই। তাই এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে দেশের চিকিৎসাসেবার নিশ্চয়তা চাইলে এই পেশার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, তাদের যৌক্তিক কোনও দাবি থাকলে তা পূরণ এবং একইসঙ্গে তাদের সঠিক মনিটরিংয়ে রাখার ব্যবস্থা রাখা। না হলে হাসপাতালগুলো হয়ে উঠবে বিনা চিকিৎসার লাশঘর অথবা গড়পড়তার মেধাবী ডাক্তারদের চিকিৎসা আতঙ্কের আয়নাঘর।

লেখক: কলামিস্ট ও নাট্যকার
[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
স্কুল শেষে শিশুদের ক্যাম্পে গাড়ি ঢুকে নিহত ৪
স্কুল শেষে শিশুদের ক্যাম্পে গাড়ি ঢুকে নিহত ৪
গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চিকিৎসাধীন অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু
গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চিকিৎসাধীন অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু
আজ আর্সেনাল-পিএসজি দ্বৈরথ
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, সেমিফাইনালআজ আর্সেনাল-পিএসজি দ্বৈরথ
উত্তর আমেরিকায় দারুণ সূচনা
উত্তর আমেরিকায় দারুণ সূচনা
সর্বশেষসর্বাধিক