X
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
৬ বৈশাখ ১৪৩২

কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ প্রসঙ্গ

আনিসুর রহমান
১৭ জুলাই ২০২৪, ১৯:১৭আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৪, ১৯:১৭

আধুনিকতার তাৎপর্য হচ্ছে ব্যক্তির অস্তিত্ব, অধিকার আর  মর্যাদার স্বীকৃতি দেওয়া। রাষ্ট্রযন্ত্রে এই স্বীকৃতির কার্যকর উপায় হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা। আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম হয়েছে অর্ধশতকের একটু ওপরে। রাষ্ট্রব্যবস্থার আগে পরাধীন শাসন আমলে এখানকার জনগোষ্ঠী মূলত পরিচালিত হয়েছে সমাজব্যবস্থা দ্বারা। রাষ্ট্র তখন ছিল মূলত রাজ-রাজড়াদের  ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজধানী থেকে বড় বড় নগর আর বন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত। যদিও শোষণের মাত্রা জমিদার সামন্তশ্রেণির মাধ্যমে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

পরাধীন আমলে আমাদের অবস্থা কেমন ছিল তা বোঝার জন্যে ছোট একটি উদাহরণ দেবো। ১৯৩৫ সালের আগ পর্যন্ত এই ভূবঙ্গের গ্রামের মানুষের ভোটাধিকার ছিল না। কেবল শহরের মানুষ ভোট দিতে পারতো। ১৯৩৫ সালে শহরের মানুষের মতো গ্রামের মানুষও ভোটাধিকার পেলো।

এই এক সিদ্ধান্তের কারণে নগরকেন্দ্রিক সামন্তপ্রভুদের একচেটিয়া নেতৃত্ব খর্ব হলো ১৯৩৫ সালে এই বঙ্গে নির্বাচনের মাধ্যমে। তার রেশ ধরে বঙ্গসহ ভারতবর্ষের মানচিত্রই উল্টেপাল্টে গেছে, জন্ম হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের।

সেই স্বাধীন বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং গণযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। যার চেতনাধারা ছিল নিম্নোক্ত স্লোগানের মধ্যেও:

তুমি কে? আমি কে?
বাঙালি, বাঙালি।
তোমার আমার ঠিকানা
পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।

এই ঠিকানার পথপরিক্রমা আর রূপরেখা নির্ধারণ করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর তার অনুসারী নেতৃবৃন্দ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একাত্ম হয়েছিলেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক কল্যাণের পক্ষের সব দল, নৃগোষ্ঠী ও শ্রেণি পেশার মানুষ। এর বিপরীতে ছিল দখলদার রাষ্ট্রযন্ত্র পাকিস্তান আর প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে তাদের সমর্থনকারী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রসংঘ, পতিত মুসলিম লীগ এবং প্রতিক্রিয়াশীল তথাকথিত চীনপন্থি বাম রাজনৈতিক চক্রের কেউ কেউ।

স্বাধীন বাংলাদেশ ১৯৭৫-এর ট্র্যাজেডির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বাংলাদেশ ছিটকে পড়ে। এখন পর্যন্ত ১৯৭১-এর অক্ষরেখায় আমাদের দেশটি পুরোপুরি ফিরতে পারেনি। বিগত পাঁচ দশকে স্বাধীন ভূখণ্ডে ঘটে গেছে অনেক রাজনৈতিক ঘটন-অঘটন। রাষ্ট্রযন্ত্র তার কাঠামো নিয়ে সামগ্রিক অর্থে ১৯৭১-এর আকাঙ্ক্ষায় মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেনি। এর মধ্যে ৭১-এর বিরোধী চেতনার সঙ্গে যোগ হয়েছে আমলাতন্ত্রের নানা স্তরে ঘুষ দুর্নীতির মহামারি।

এরকম একটি বাস্তবতায় আশাব্যঞ্জক সত্য হচ্ছে গুটিকয়েক যুদ্ধাপরাধী রাজাকারকে পাকড়াও করে বিচারের মুখোমুখি করা গেছে। তবে এর বিপরীতে এদের প্রতি সহমর্মী নানা শক্তি দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে গেছে এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছে। যার সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা বহুজাতিক কূটনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং করপোরেট স্বার্থসিদ্ধির বিষয়।

এমন বাস্তবতায় আমাদের ক্ষেত্রবিশেষে অকার্যকর বা ভেঙে পড়া সমাজব্যবস্থার স্থলে রাষ্ট্রযন্ত্র তার পুরো ভূমিকা দেখাতে পারেনি। এই ভেঙে পড়া সমাজে নগরকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠিত গুটিকয়েক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে দেখে গ্রামে গ্রামে বসবাসরত কৃষক শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে মিলিয়ে দেখলে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে না। আদতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো অনগ্রসর পর্যায়ে রয়ে গেছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের এই হীন চিত্রের পেছনের কারণ রাজনৈতিক বিভাজন এবং ঔপনিবেশিক ভাবধারার দুর্নীতিপ্রবণ আমলাতন্ত্র। এই অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতার কবল থেকে মুক্ত নয় দেশের শিক্ষাঙ্গন, কর্মবাজার এবং নতুন প্রজন্ম।

সেই খপ্পরের কুৎসিত, অগ্রহণযোগ্য আর বীভৎস রূপ আমরা দেখলাম যখন দেশের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মধ্যরাতে রাস্তায় নেমে এলো, একাত্তরের স্লোগান বিকৃত করে:

 (তুমি কে? আমি কে?
রাজাকার ! রাজাকার।

বিকৃত স্লোগান যদি সম্পূর্ণ করতে হয় তাহলে যোগ  করতে হবে:

('তোমার আমার ঠিকানা
পাকিস্তান! পাকিস্তান।')

কোটা বিষয়ে তাদের দাবি তো এই স্লোগানেই খারিজ হয়ে যায়।

এই বিষয়ে বিশদ আলোচনায় যাবার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিক কী বলেছেন, যেটাকে অজুহাত ধরে আন্দোলনকারীদের একটা অংশ নিজেদের ’রাজাকার’ দাবি করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলো, তা উল্লেখ করতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,  “. . . মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে আর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন?  মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা (চাকরি) পাবে? সেটা আমার প্রশ্ন, দেশবাসীর কাছেও প্রশ্ন। যে রাজাকারের নাতি-পুতিরা সব পাবে, মুক্তিযোদ্ধারা পাবে না। অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের পরিবার সংসার সব কিছু ফেলে দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, দিন-রাত খেয়ে না খেয়ে, কাদা মাটিতে রোদ বৃষ্টি ঝড় সব মোকাবিলা করে যুদ্ধ করে এই দেশের বিজয় এনে দিয়েছিল। ... ”

প্রধানমন্ত্রী ঠিক কথাই বলেছেন। যা সত্য তাই তিনি বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কথার প্রতিক্রিয়ায় যারা নিজেদের ’রাজাকার’ পরিচয় দিয়ে রক্ত দিয়ে অর্জন করা স্বাধীন দেশের মানুষের করের টাকায় পরিচালিত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করবেন আর স্লোগান দেবেন, মিছিল নিয়ে বের হবেন 'রাজাকার রাজাকার' বলে।  আপনারা এই অধিকার কোথায় পেলেন? আপনারা সরকারকে অপছন্দ করতে পারেন, প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন না-ই করতে পারেন, আপনাদের দাবি দাওয়া প্রকাশ করতে পারেন, মিছিল মিটিং করতে পারেন, আইন আদালত পর্যন্ত যেতে পারেন। এর সব অধিকার এবং এখতিয়ার আপনার আছে আপনি যতক্ষণ এই দেশ দেশের আইন এবং ইতিহাসকে নিজের পরিচয় বলে মান্য করবেন।

হ্যাঁ, আপনি যদি নিজেকে রাজাকার বলে জাহির করতে চান, সেই অধিকারও নিতে পারেন, তখন কিন্তু আপনার ঠিকানা ৭১-এর চেতনায় অর্জিত বাংলাদেশ থাকে না। আপনি বাঙালি হিসেবে খারিজ হয়ে গেলেন। আপনি আপনার ইচ্ছায় হয়ে গেলেন সাচ্চা রাজাকার। তাই বলতে চাই, আপনাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে কিনা সেটাও পরিষ্কার হওয়া দরকার।

চলমান কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে আসি। একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে চলতে হবে অগ্রসর সবাইকে নিয়ে। গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার পাবেন, কিন্তু দায়বদ্ধ থাকবেন সংখ্যালঘিষ্ঠের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার জন্যেও। এই কোটা নতুন কোনও আবিষ্কার নয়। এমনকি ব্রিটিশ আমলেও আসাম-বেঙ্গলে অনগ্রসর মুসলমানদের জন্য মুসলিম কোটা ছিল। দুনিয়ার এমন কোনও রাষ্ট্র খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রয়োজনে কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়নি। আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রে কেবল সরকারি ক্ষেত্রে নয়, বেসরকারি খাতেও শর্ত থাকে পিছিয়ে পড়া কিংবা বিশেষ জনগোষ্ঠীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার জন্যে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আদিবাসী নৃগোষ্ঠী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন অংশ, ভিন্নরকম যৌন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী মানুষ, রাষ্ট্রে নবাগত শ্রেণি এবং তরুণ জনগোষ্ঠী। এর বাইরেও কর্মবাজারে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যে নেওয়া হয়ে থাকে জাতীয়, আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মযজ্ঞ এবং প্রকল্প।

সরকারি চাকরিতে কোটা বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। আদালত কি রায় দিবেন সেই বিষয়ে অগ্রিম কথা বলার এখতিয়ার কারও নাই। তবে কোটা সংস্কার নিয়ে বিস্তর আলোচনা হতে পারে, বিতর্ক হতে পারে। তবে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে আদালতের চূড়ান্ত রায়ের পর। প্রয়োজনে সংসদেও আইন প্রণয়নের সুযোগ থাকবে তখন। কোনও অবস্থাতেই কোটা নিয়ে গোটা মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে বাংলাদেশের অস্তিত্বের চেতনাকে অস্বীকার করার এখতিয়ার কেউ পেতে পারে না।

তবে সংস্কারের দৃষ্টি কেবল কোটায় সীমাবদ্ধ রাখলে মূল সমস্যার সমাধান হবে না। দলমত নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি বেকার নাগরিককে ঘুষ আর হয়রানি থেকে মুক্ত করে যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী আধুনিক কর্মবাজারের সঙ্গে কীভাবে সংযুক্ত করা যায় সেই দিকটাও বিবেচনায় রাখা দরকার। বেশি দিন আগের কথা নয়, সৎ উপায়ে নির্দিষ্ট বেতনে চলা কঠিন বিবেচনা করে অনেকেই সরকারি চাকরিকে আকর্ষণীয় মনে করতেন না একসময়। এর বিপরীতে বেসরকারি চাকরি কিংবা ব্যবসায়ী উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতেন। সরকারি চাকরির প্রতি মরণপণ ঝোঁক এখন সমাজের অধিকাংশ তরুণের মাঝে।

বিগত দুই দশকে কেন কীভাবে এই 'বিকলাঙ্গ' পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো তা চিহ্নিত করার প্রয়োজন আছে।  

সমাজ, শিক্ষাঙ্গন ও রাষ্ট্র এমন পর্যায়ে চলে গেছে সরকারি চাকরি বিশেষ করে বিসিএস ক্যাডার ছাড়া জীবনের আর যেন বড় কোনও লক্ষ্য নাই। ভাবখানা এরকম, একবার বিসিএস ক্যাডার হতে পারলে যেন রাজবংশে ঢুকে গেলো। এই বিকলাঙ্গ মানসিকতা থেকে এই প্রজন্ম ও সমাজের উত্তরণ দরকার। বিকলাঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমাজকে রক্ষার জন্যে জরুরি দেশের গোটা কর্মবাজারের সংস্কার করে আধুনিক কর্মসংস্থান নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। এ জন্যে প্রথমে জাতীয় সংসদে বিস্তারিত আলোচনা সাপেক্ষে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। যার অন্যতম উদ্দেশ্য থাকবে চাকরিবাজারের নানা খাতের বৈষম্য দূর করা; বিশেষ করে 'বিসিএস' আর 'অ -বিসিএস' চাকরির যে আকাশচুম্বী সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য তার মূলোৎপাটন করা।

রাজাকারের নাতিপুতি বিষয়ে আরও একটু আলোকপাত করতে চাই।  আদতে রাজাকার, রাজাকারের সন্তানেরা এবং এদের নাতিপুতিগণ কেউই হৃদয়ে বাংলাদেশ ধারণ করেন না। এরা ছদ্মবেশে থাকেন, নিরপেক্ষতার ভান করেন, এরা ক্ষমতার ভেতরেও থাকেন, বাইরেও থাকেন।  এদের অনুপ্রবেশ সর্বত্র। সামাজিক প্রতিপত্তি আর প্রতিষ্ঠান জেরে অভিজাতদের সঙ্গে এদের  রয়েছে বিস্তর আত্মীয়তা।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ না থাকার সুযোগ নিয়ে সাধারণ ছাত্রের ব্যানারে ছদ্মবেশী গোষ্ঠী রাস্তায় নেমে আসে। ক্ষেত্রবিশেষে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ে আর রসদ জোগায় সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠন  ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদল। রাজাকার চেতনা বোঝার জন্যে আজ থেকে দুই যুগ আগে প্রকাশিত মুনতাসির মামুনের 'রাজাকারের মন' বইটি কাজে দিতে পারে। বইটি দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন রাজাকারের আত্মজীবনীর ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে।

এই আত্মজীবনীকার রাজাকারদের মধ্যে আছেন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন, বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার মালিক নোয়াখালীর হামিদুল হক চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সারের খুনি খালেক মজুমদার, রাজশাহীর রাজাকার আয়েন উদ-দীন, কিশোরগঞ্জের রাজাকার কেএম আমিনুল হক, কুষ্টিয়ার রাজাকার সা'দ আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর আমীর আব্বাস আলী খান এবং বাগেরহাটের রাজাকার ডা. আবদুল বাসেত।

সত্য আর মিথ্যায় ভরা নানা কূটকৌশলে এদের জীবনের নানা বয়ান এরা হাজির করেছেন তাদের আত্মজীবনীতে। যার অনেক অংশজুড়ে আছে ক্ষোভ জাতির জনকের প্রতি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি। তাদের প্রত্যেকের আত্মজীবনীতে একটি বিষয় স্পষ্ট এবং প্রায় একই রকম তা পাকিস্তানের সব ছিল সাচ্চা আর সব ভুল আর গণ্ডগোলের মূলে বাঙালি, শেখ মুজিব, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশ। প্রতিটি কয়েক শত পৃষ্ঠা সংবলিত এই আত্মজীবনীগুলো রাজাকারগণ লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেফতার হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের কারাগারে বসে। রাজাকারদের প্রায় সবাই ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যার পর মুক্ত হয়েছিলেন এবং সমাজ, রাজনীতি, ব্যবসা ও প্রশাসনে প্রতিষ্ঠা ফিরে পেয়েছিলেন। এই আত্মজীবনীগুলো নিয়ে নানা পর্যায়ে গবেষণার সূত্র হিসেবে কাজে দিতে পারে।

তবে শেষ কথা হলো, 'রাজাকার! রাজাকার' স্লোগান যেমন গ্রহণযোগ্যতা পেতে পেরে না,  ঠিক তেমনি এই অজুহাতে আন্দোলনকারী  শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার অধিকারও কেউ রাখে না। আন্দোলনে পক্ষে বিপক্ষে উসকানি বা সংঘর্ষ কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।  উভয় পক্ষের হতাহতের ঘটনার সুরাহাও প্রয়োজন। নিহত আর আহতদের পরিবারের পাশেও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের দাঁড়ানো জরুরি। একটি মানবিক রাষ্ট্রের এমনটাই রীতি।  

কোটাসহ দেশের কর্মবাজারের সামগ্রিক সংস্কারে আশাবাদ ব্যক্ত করে রাজাকারিত্ব রুখবার পাশাপাশি এই সমাজ ও রাষ্ট্রের দুর্নীতি আর জঞ্জালের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার জয়গানে তরুণদের উদ্দেশে সুকান্ত ভট্টাচার্যের ’ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের 'আঠারো বছর বয়সে' কবিতা থেকে কয়েকটি পঙক্তি উদ্ধৃত করতে চাই:

এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,
এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়-
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে ।

 
লেখক: কবি ও নাট্যকার; বোর্ড সদস্য, সুইডিশ রাইটার্স ইউনিয়ন।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৫)
খামারে আগুন, পুড়ে মারা গেছে ৫০ হাজার মুরগি
খামারে আগুন, পুড়ে মারা গেছে ৫০ হাজার মুরগি
সুন্দরবনের দস্যু করিম শরিফ বাহিনীর দুই সহযোগী অস্ত্রসহ আটক
সুন্দরবনের দস্যু করিম শরিফ বাহিনীর দুই সহযোগী অস্ত্রসহ আটক
কুষ্টিয়া সীমান্তে ফেনসিডিলসহ ৩ ভারতীয় মাদক কারবারি আটক
কুষ্টিয়া সীমান্তে ফেনসিডিলসহ ৩ ভারতীয় মাদক কারবারি আটক
সর্বশেষসর্বাধিক