X
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
১৬ বৈশাখ ১৪৩২

সবার জন্যই স্বস্তির বাংলা ট্রিবিউন

প্রভাষ আমিন
১৩ মে ২০২৩, ১২:৪৩আপডেট : ১৩ মে ২০২৩, ১২:৪৩

বাংলা ট্রিবিউন থেকে ফোন করে জানানো হলো ১৩ মে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। মুহূর্তে মনের টাইম মেশিনে ঘুরে দেখি ৯ বছরের অনেক স্মৃতি। ২০১৪ সালের মে মাসের শুরুর দিকে জুলফিকার রাসেল যখন ফোন করে বললেন, ‘একটি নতুন অনলাইন নিউজ পোর্টাল আসছে। একটা লেখা দিয়েন’। নিউজ পোর্টালের নাম না জেনে স্রেফ জুলফিকার রাসেলের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সুবাদে লেখা পাঠালাম। ২০১৪ সালের ১৩ মে বাংলা ট্রিবিউনের প্রথম দিনে দুটি কলাম প্রকাশিত হয়েছিল। একটি জনপ্রিয় কলামিস্ট মাসুদা ভাট্টির, আরেকটি এই অধমের। আমি নাম না জেনেই যে নিউজ পোর্টালের জন্য লিখেছিলাম, সেই নিউজ পোর্টালের নাম এখন সবাই জানেন, আস্থা রাখেন, বিশ্বাস করেন।

৯ বছরে একটা প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্জনটাও কম নয়। আমি সেই বাংলা ট্রিবিউনের প্রথম কলামিস্ট, এটা আমাকে গর্বিত করে। বাংলা ট্রিবিউনের পান্থপথের অফিসে হয়তো দুয়েকবার গিয়েছি, কিন্তু বাংলা ট্রিবিউনকে আমি আমার বৃহত্তর পরিবারের অংশ বলেই মানি। জুলফিকার রাসেলসহ এই পরিবারের অনেকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তো আছেই, বাংলা ট্রিবিউনে কেমন একটা আপন আপন ভাব আছে। ৯ বছরে মান-অভিমান, মত-দ্বিমতের অনেক ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক অটুট আছে, বলা ভালো আরও মজবুত আছে। বাংলা ট্রিবিউন আমাকে দিয়েছে লেখার অবাধ স্বাধীনতা, সঙ্গে পেশাদারিত্বের ছোঁয়া।

তিন দশকেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতায় চোখের সামনে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়তে দেখেছি, অনেক প্রতিষ্ঠান ভাঙতে দেখেছি, অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হতেও দেখেছি। তবে বাংলা ট্রিবিউন প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্য রকম। ৯ বছরে এই প্রতিষ্ঠানে অনেকেই এসেছেন, অনেকেই ছেড়েও গেছেন, কিন্তু ৯ বছরে বাংলা ট্রিবিউনের মূল টিমটা এখনও অটুট আছে। বাংলাদেশের মতো ভঙ্গুর বাজারে এটাও কম সাফল্য নয়। যারা ছেড়ে গেছেন তারাও বাংলা ট্রিবিউনকে অন্তর থেকে ধারণ করেন, ভালোবাসাটা তাদের ছেড়ে যায়নি। যারা আছেন, তারাও দেখেছি বাংলা ট্রিবিউনকে ভালোবাসেন অন্তর দিয়ে। তাদের কাজের মাত্রাটাও পেশাদারিত্বকেও ছাড়িয়ে যায়। ভালোবাসা না থাকলে এটা সম্ভব নয়। অনেক বড় প্রতিষ্ঠানে অনেক অসুখী কর্মী দেখেছি। বেশি বেতনের চাকরি ছেড়ে কম বেতনে যোগ দেওয়ার উদাহরণও অনেক আছে। কিন্তু বাংলা ট্রিবিউনের কর্মীদের কেউ অন্তত টাকার জন্য চাকরি ছেড়েছেন, এমন উদাহরণ কম। এই করপোরেট যুগে, এমন উষ্ণ গণমাধ্যম অফিস বিরলই বটে। শুরুতে যতটা সচ্ছলতা ছিল এখন ততটা নেই। কিন্তু সচ্ছলতার চেয়ে স্বস্তিটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেই স্বস্তিটা ষোলোআনাই আছে বাংলা ট্রিবিউনে।

তবে শুধু কর্মীরা স্বস্তি পেলেই সেই প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে না। কর্মীদের স্বস্তিটা ছড়িয়ে দিতে হবে পাঠকদের মধ্যেও। বাংলা ট্রিবিউনের আসল সাফল্য মানি, পাঠকদের মধ্যেও স্বস্তি ছড়িয়ে দিতে পারাটাকে। ৯ বছরে বাংলা ট্রিবিউন পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে গেছে, এমন দাবি তারাও করেনি। আমার ধারণা তারা পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছানোর চেষ্টাও করেনি। এখন যেভাবে ক্লিক গুনে সাংবাদিকতার উৎকর্ষ মাপার জোয়ার চলছে, বাংলা ট্রিবিউন তাতে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। বাংলা ট্রিবিউন ভালো সাংবাদিকতা করতে চেয়েছে। আর সাংবাদিকতা দিয়েই পাঠকদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন নেওয়ার চেষ্টা করেছে। চটকদার শিরোনাম দিয়ে হিট বাড়ানোর সহজ পথ ছেড়ে তারা ভালো সাংবাদিকতা দিয়ে নিজেদের অবস্থান মজবুত ও টেকসই করার কণ্টকাকীর্ণ পথটাই বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশে এখন অনলাইনে সাংবাদিকতার নামে যা চলছে, তাতে সাংবাদিকতার বারোটা বাজছে। সুড়সুড়ি দেওয়া শিরোনাম, শিরোনামের সঙ্গে সংবাদের মিল না থাকার ঘটনা তো অহরহ ঘটছে। স্রেফ কাট-পেস্ট করে টিকে আছে অনেক অনলাইন। ৯ বছরে এমন কোনও অভিযোগ অন্তত বাংলা ট্রিবিউনে ঘটেনি।

বাংলা ট্রিবিউনের বয়স মাত্র নয়, কিন্তু এর উদ্যোক্তারা গণমাধ্যমে নতুন নন। বাংলা ট্রিবিউনের প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদের পিতা কাজী শাহেদ আহমেদ বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বাঁক বদলে দেওয়া প্রকাশনা ‘আজকের কাগজ’-এর উদ্যোক্তা ছিলেন। গণমাধ্যমের জন্য পিতার ভালোবাসা ধরে রেখেছেন নতুন প্রজন্ম, এটা আনন্দের খবর। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে উদ্যোক্তারা বাংলা ট্রিবিউনকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন, এই প্রত্যাশা।

কথায় আছে, ‘যার হয় না নয়ে, তার হয় না নব্বইয়ে’। তবে বাংলা ট্রিবিউনের নয়ে হয়ে গেছে। বাংলা ট্রিবিউনের ৯ বছরের গৌরবের পথচলা নব্বইয়েও অটুট থাকুক।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পরিবেশ দূষণের দায়ে জরিমানা, পলিথিন জব্দ
পরিবেশ দূষণের দায়ে জরিমানা, পলিথিন জব্দ
নোয়াখালীতে লক্ষ্মীপুরের যুবলীগ নেতাকে পুলিশে দিলো ছাত্র-জনতা
নোয়াখালীতে লক্ষ্মীপুরের যুবলীগ নেতাকে পুলিশে দিলো ছাত্র-জনতা
বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তার হবু স্ত্রীকে ধর্ষণ ছাত্রদল নেতার
বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তার হবু স্ত্রীকে ধর্ষণ ছাত্রদল নেতার
শ্যালক খুনের মামলায় দুলাভাইয়ের যাবজ্জীবন
শ্যালক খুনের মামলায় দুলাভাইয়ের যাবজ্জীবন
সর্বশেষসর্বাধিক