X
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
৭ বৈশাখ ১৪৩২

করোনা পরিস্থিতির তথ্য-উপাত্ত উদ্বেগজনক নয়

ড. সেলিম মাহমুদ
১২ মে ২০২০, ১৬:৫৮আপডেট : ১২ মে ২০২০, ১৭:০০

ড. সেলিম মাহমুদ বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ব্যক্তি বাংলাদেশকে ঘিরে নানা রকমের তথ্য প্রচার করে আসছে। মহামারির এই সময়ে তারা একেক সময়ে একেক কথা বলে আসছে। কখনও বলেছে বাংলাদেশে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক মারা যাবে। রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকবে। ওই চক্রটি একটি বিদেশি গণমাধ্যমকে দিয়ে এই মর্মে রিপোর্ট করিয়ে ছিল যে করোনায় বাংলাদেশে দুই মিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ ২০ লক্ষ মানুষ মারা যাবে। তারা বলেছিল, এপ্রিলের মাঝামাঝি বাংলাদেশ একটা মৃত্যুকূপে পরিণত হবে। পরে আবার বলেছিল, মে মাসের শুরুর দিকেই করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশে ভয়াবহ রূপ নেবে। তাদের কেউ কেউ বলে আসছিল, আমরা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বো। মোদ্দাকথা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশে খারাপ কিছু দেখতে চেয়েছিল। অসংখ্য লাশ দেখতে চেয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সরকারের নানা কার্যকর পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি স্থিতিশীল থাকায় এই চক্রটি বেশ আশাহত ও হতাশ। তারপরও তাদের তথ্য সন্ত্রাস থেমে নেই।

বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়; এটা আমাদের অনুকূলেই থাকবে। করোনা সংক্রমণ, সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়া এবং করোনায় মৃত্যুর হারের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে নিয়মিত পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা হচ্ছে। গতকালের হালনাগাদ তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে যে সারণি প্রস্তুত করা হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই আমি একটি মূল্যায়ন উপস্থাপন করছি।

সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সমাপ্ত ঘটনায় (closed cases) সুস্থতার হার ৯২% এবং মৃত্যুর হার ৮%। আর শনাক্ত ঘটনা বিবেচনায় (current cases) সুস্থতার হার ১৮.৫ % এবং মৃত্যুর হার মাত্র ১.৫ %। বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির দুই ধরনের হার-ই (%), অর্থাৎ সমাপ্ত ঘটনায় (closed cases) সুস্থতা লাভ ও মৃত্যুর হার এবং শনাক্ত ঘটনায় (current cases) মৃত্যুর হার বৈশ্বিক চিত্রের চেয়ে আশাব্যঞ্জক।  বর্তমানে করোনার বৈশ্বিক চিত্র হচ্ছে, করোনা আক্রান্তের সমাপ্ত ঘটনায় সুস্থতার হার ৮৪% ও মৃত্যুর হার ১৬%। আর বৈশ্বিক শনাক্ত ঘটনায় (current cases) মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর হার ২%। দেখা যাচ্ছে, সমাপ্ত ঘটনায় বৈশ্বিক সুস্থতার হারের (৮৪% ) চেয়ে আমাদের সুস্থতার হার (৯২%) উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি এবং বৈশ্বিক মৃত্যুর হারের (১৬%) চেয়ে আমাদের মৃত্যুর হার ঠিক অর্ধেক (৮%)।  অন্যদিকে, বৈশ্বিক শনাক্ত ঘটনায় মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর হার (২%) বাংলাদেশের একই শ্রেণির হারের (১.৫) চেয়ে বেশি ।

বাংলাদেশের করোনা আক্রান্তের সমাপ্ত ঘটনাগুলো (closed cases) স্বতন্ত্রভাবে আমলে নিলে চিত্রটা অনেকের কাছে কিছুটা উদ্বেগজনক মনে হতে পারে। করোনা আক্রান্তের শনাক্ত ঘটনাগুলো অর্থাৎ কারেন্ট কেসগুলো আমলে না নিলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশে মৃত্যুর হার প্রথমদিকে বেশি দেখালেও আস্তে আস্তে সুস্থতার হার বাড়ছে। কারণ, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হতে কিছু দিন সময় লাগে। সুস্থতার হার বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুর হার কমবে, যা বর্তমানে আমরা অবলোকন করছি।

একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই, কেউ কেউ বলছেন যে বর্তমানে যে পরিসংখ্যান দেখানো হচ্ছে সেটি সঠিক নয়। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, যেহেতু বাংলাদেশে অধিক সংখ্যক মানুষের টেস্ট করানো হচ্ছে না, তাই এই সুস্থতার ও মৃত্যু হারের সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে না।  একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর কোথাও ঢালাওভাবে করোনা টেস্ট করা হয় না। যাদের টেস্ট করা প্রয়োজন, তাদেরই কেবল করানো হয়। আমাদের দেশেও এই প্রসিডিওর অনুসরণ করা হচ্ছে। কম টেস্টের কারণে সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে যে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, সেটি তাদের যুক্তির অসারতাই প্রমাণ করে। কারণ, টেস্ট কম করলে মৃত্যুর হার কমানো যায় না। বরং টেস্ট কম করানো হলে টেস্টের বাইরে থাকা অসংখ্য সংক্রমিত মানুষ যারা নিজে নিজেই সুস্থ হয়ে উঠছেন, তাদের সংখ্যা তথ্য-বিশ্লেষণ তথা সার্বিক পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হয় না। এর ফলে সুস্থতার হারের চেয়ে কৃত্রিমভাবে মৃত্যুর হার বেশি দেখানো হবে। কারণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এটি স্বীকৃত যে সাধারণত ৮০% থেকে ৮৫% করোনা আক্রান্ত মানুষ কোনও চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাই বাংলাদেশে টেস্টের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থতার হার বেড়ে যাবে এবং মৃত্যুর হার কমতে থাকবে। করোনা টেস্টের আগেই করোনার লক্ষণ নিয়ে কিছু মানুষের মৃত্যুর যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে, সেটি আমলে নিলেও করোনায় স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যার পরিধি বিবেচনায় এই স্বল্পসংখ্যক মৃত্যু আমাদের পরিসংখ্যানের হারে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারবে না।

এটি আমাদের মনে রাখতে হবে, বর্তমানে সমাপ্ত ঘটনাগুলোর (closed cases) যে হার অর্থাৎ মৃত্যুর হার ৮% আমরা দেখছি, সেটি স্থায়ী বা constant হার নয়। এটি শনাক্ত ঘটনাসমূহের মৃত্যুর হার অর্থাৎ ১.৫ %-কে বিবেচনায় নিয়ে আগে উল্লেখিত নীতি অনুযায়ী সময়ে সময়ে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। মোটা দাগে বলতে গেলে বলতে হয়, বাংলাদেশে টেস্টের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থতার হার বেড়ে যাবে এবং মৃত্যুর হার কমতে থাকবে।  সহজভাবে বলতে গেলে, বাংলাদেশে করোনার পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক নয়।

লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ বিব্রতকর: পুলিশ সুপার
ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ বিব্রতকর: পুলিশ সুপার
চট্টগ্রামে খাল-নালায় ১৫ জনের মৃত্যু, তবু উদাসীন সিটি করপোরেশন ও সিডিএ
চট্টগ্রামে খাল-নালায় ১৫ জনের মৃত্যু, তবু উদাসীন সিটি করপোরেশন ও সিডিএ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৫)
মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি
মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি
সর্বশেষসর্বাধিক