X
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
৬ বৈশাখ ১৪৩২

‘নায়ক’ শব্দটির সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল ‘রাজ্জাক’ নামটি দিয়ে

আফসানা মিমি
২৩ আগস্ট ২০১৭, ১২:৪০আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০১৮, ১৯:৩৬

আফসানা মিমি ছোটবেলায় দেখা সিনেমা ‘ময়নামতি’। ময়না আর মতির বিচ্ছেদের দৃশ্যে হলভর্তি মানুষ আকুল হয়ে কাঁদছে। ‘অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়/ মিছে তারে শিকল দিলাম রাঙা দুটি পায়।’
নায়করাজ রাজ্জাকের হৃদয়স্পর্শী অভিনয় সবাইকে কাঁদাচ্ছে। ছোট্ট আমিও কাঁদছি, আমারও মনে ব্যথা লাগছে। প্রেম কী, তা বুঝি না তখন, কিন্তু ‘প্রিয়জনকে ছেড়ে যেতে হচ্ছে’ সেই বোধটা আমাকেও কাঁদাচ্ছে।
আমার শৈশবে সিরাজগঞ্জ শহরে দু’টি হল ছিল। ‘লক্ষ্মী’ আর ‘মমতাজ’। প্রত্যেক সপ্তাহে হলে গিয়ে ‘ম্যাটিনি শো’তে সিনেমা দেখার রেওয়াজ ছিল আমাদের। শুধু আমাদের পরিবারে নয়, নিয়মিত সিনেমা দেখার রেওয়াজ ছিল সিরাজগঞ্জ ওয়াপদা কলোনির সব পরিবারেই। শুধু কি তাই? স্কুলের পিকনিক শেষেও হলে গিয়ে সিনেমা দেখা চাই সবাই মিলে! আমি তখন সালেহা স্কুলে পড়ি। বছর শেষে পিকনিক, তারপর ছোট-বড় সবাই দল বেঁধে স্কুল থেকে চললো ‘লক্ষ্মী’ হলে। নায়করাজ রাজ্জাকের ‘আগুন’ সিনেমা দেখা হবে। সিনেমা হলের সামনে পৌঁছে, জমে থাকা জলের মধ্যে আমি আছাড় খেলাম, কাদায় মাখামাখি হলো জামাকাপড়। আমাকে আর সঙ্গে নেওয়া গেলো না, সবাই আনন্দ করতে করতে ঢুকে পড়লো সিনেমা দেখতে। এমনকি আমার বড় বোন পর্যন্ত আমাকে ফেলে চলে গেলেন। আমি কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরলাম। তারপর এ জীবনে আমার আর ‘আগুন’ সিনেমাটি দেখা হয়নি। এখনও আফসোস রয়ে গেছে!

যখন ‘ছুটির ঘণ্টা’ মুক্তি পায়, তখন বাবার কর্মসূত্রে থাকি টঙ্গীর ওয়াপদা কলোনিতে। ক্লাস সেভেনে পড়ি।
শুনলাম অন্যরকম এক সিনেমা ‘ছুটির ঘণ্টা’, যেখানে একটা বাচ্চা স্কুল ছুটির সময় বাথরুমে আটকা পড়ে যায়, কয়েকদিন পর বন্ধ স্কুলের ভেতরেই ছেলেটি মারা যায়। আমরা কলোনির সব বাচ্চা মিলে ছুটলাম সেই কত দূরের আনারকলি হলে। সে সময় কলোনির কারোরই ব্যক্তিগত গাড়ি ছিল না। সিনেমা দেখতে অফিসের গাড়ি নেওয়াও সম্ভব না। আর এত বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে রিকশা যাত্রাও কঠিন। অতএব হন্টন। যাওয়ার সময় খুব কষ্ট হয়েছিল অতটা পথ হাঁটতে, পা টনটন করছিল ব্যথায়। আর ফেরার সময় বুকটা ভারী হয়ে উঠেছিল কষ্টে। পায়ের ব্যথা ভুলে সবাই প্রায় মিছিল করে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরেছিলাম।
অজস্র সিনেমা দেখেছি নায়করাজ রাজ্জাকের। কী সুন্দর দেখতে ছিলেন! কী মনকাড়া হাসি! তাঁর অভিনয় নিয়ে বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। শুধু আমার ভালো লাগা প্রকাশ করছি। কী সহজ, সুন্দর, সাবলীল ছিল তাঁর চলা, বলা, গান গাওয়া। ‘কাছে ডাকো যদি বলো, তবে দূরে কেন থাকো’ আহা! কী মনোমুগ্ধকর অভিব্যক্তি!
তাঁদের সেই ভীষণ পরিমিত অভিনয়ের যুগ ছেড়ে কখন, কিভাবে যে চড়া অভিনয়ের স্টাইল আমাদের সিনেমাকে গ্রাস করেছিল ভাবলে অবাক লাগে!
তাঁর অনেক অনেক সিনেমার মধ্যে আমার বিশেষ প্রিয় ‘অনন্ত প্রেম’। তাঁর অনেক সিনেমা এখনও অদেখা। তিনি ছিলেন নায়করাজ অথচ কত ভিন্ন রকমের চরিত্রে কাজ করেছেন। যে ববিতার সাথে তিনি ‘টাকা আনা পাই’তে রোমান্টিক নায়ক, আলোর মিছিলে তাঁরই মামা। কখনও অশিক্ষিত রহমত ভাই, আবার কখনও ছুটির ঘণ্টার স্কুল দফতরি। কোনও সংকীর্ণ গণ্ডিতে নিজেকে বেঁধে রাখেননি।
নায়করাজ রাজ্জাক আমার কাছে ‘রাজ্জাক ভাই’হয়ে উঠলেন যখন আমিও অভিনয় পেশায় নাম লেখালাম। যদিও আমার ক্ষেত্র আলাদা, আমি মূলত কাজ করেছি মঞ্চ আর টেলিভিশনের জন্যে। আমার সিনেমার সংখ্যা হাতেগোনা। তবু অভিনয় জগতে অনুজ হিসেবে তাঁর স্নেহধন্য হয়েছি যখনই দেখা হয়েছে। তাঁর প্রয়াণে মনটা কেমন করে উঠলো। ইশ! কেন কখনও তাঁর কাছে গিয়ে অনেক অনেক গল্প শোনা হলো না! আমাদের সিনেমার সেইসব স্বর্ণালী সময়ের গল্প...
একবার তাঁর জন্মদিনে চ্যানেল আইয়ের তারকা কথন অনুষ্ঠানে ফোন করে বলেছিলাম ‘শুভ জন্মদিন!’
আজ কী বলবো তাই ভাবছি-
অনন্ত প্রেম থেকে অনন্ত শান্তির এই যাত্রা শুভ হোক...
(রাজ্জাক ভাই, আপনাদের নির্মাণ করা পথ ধরে আমরা হেঁটে চলেছি। আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি...)

লেখক: অভিনয় শিল্পী ও নির্মাতা

এসএএস/ এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভর্তুকি মূল্যে পাটের ব্যাগ সরবরাহ করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
ভর্তুকি মূল্যে পাটের ব্যাগ সরবরাহ করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
সালিশের নামে বাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট: যশোরে বিএনপির দুই নেতাকে বহিষ্কার
সালিশের নামে বাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট: যশোরে বিএনপির দুই নেতাকে বহিষ্কার
একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে ক্ষমতা আনতে জুলাই অভ্যুত্থান হয়নি: নাহিদ ইসলাম 
একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে ক্ষমতা আনতে জুলাই অভ্যুত্থান হয়নি: নাহিদ ইসলাম 
দেশের ইতিহাসে ‘শ্রেষ্ঠ নির্বাচন’ হবে, আনফ্রেলকে আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার
দেশের ইতিহাসে ‘শ্রেষ্ঠ নির্বাচন’ হবে, আনফ্রেলকে আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার
সর্বশেষসর্বাধিক