আদালতের আদেশের পরও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নাসির গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থপাচার মামলা তদন্ত সম্পন্ন না করায় অবহেলাকারীদের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৪০ দিনের মধ্যে বিষয়টি তদন্ত করতে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাও জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষে রবিবার (৩১ জানুয়ারি) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।
একইসঙ্গে নাসির গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলার তদন্ত চার মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে বিএফআইইউকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তদন্তের সময় পর্যন্ত এই মামলার আসামি নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন বিশ্বাসসহ সংশ্লিষ্টদের ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে ব্যক্তিগত হাজিরা মওকুফ করেছেন হাইকোর্ট।
আদালতে বিএফআইউ’র পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানভীর পারভেজ। নাসিরউদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুবর রহমান কিশোর। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
আদালত বলেছেন, অধিকতর তদন্তের জন্য বিএফআইইউকে হাইকোর্ট চার বছর আগে নির্দেশ দিয়েছিলেন কিন্তু এতদিনেও কোন অগ্রগতি নেই। শুধু চিঠি চালাচালির বিষয়টি দেখতে পাচ্ছি। উচ্চ আদালতের আদেশ প্রতিপালন না করার এই দায় কার? তদন্ত করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরে আদালত নাসির গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলার তদন্ত চার বছর ধরে ফেলে রাখার ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, প্রায় ৫৬ কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন বিশ্বাস, মো. আলফাজ উদ্দিন (জিএম, আমদানি) সহ দশ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়ে দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে নাসির গ্রুপের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাঁচামাল ও পণ্যাদি আমদানির নামে আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে ৫৬ কোটি ৩১ লাখ ৯ হাজার ৮২ টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। যা অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের ৪ ধারায় অপরাধ। এজাহারে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অপরাধ সংঘটনের সময়কাল উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা। এতে মামলার আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। বিশেষ জজ আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান।
এরপর ২০১৭ সালে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে এই অর্থ পাচারের মামলাটি তদন্তের জন্য বিএফআইইউকে নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই নির্দেশের পর চার বছর পেরিয়ে গেলেও বিএফআইইউ তদন্ত সম্পন্ন না করায় পুরো মামলা বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের নভেম্বরে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১(ক) ধারায় হাইকোর্টে আবেদন করেন নাসিরউদ্দিনসহ অন্যান্য আসামিরা।
সেই আবেদনটি শুনানির জন্য বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে আসে। হাইকোর্ট মামলার অধিকতর তদন্তের অগ্রগতি জানতে চান বিএফআইউউর কাছে। কিন্তু বিএফআইইউ’র পক্ষ থেকে মামলার তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে কোনও তথ্য হাইকোর্টকে জানাতে পারেনি।