X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্র সংগঠনে অস্থিরতা-বিভাজন, গুরুত্ব নেই মূল দলে

সিরাজুল ইসলাম রুবেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২১ জানুয়ারি ২০২১, ১১:০০আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২১, ১৩:৫৪

ভবিষ্যতের নেতা তৈরিতে ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা উপেক্ষা করা যায় না বলে মনে করেন অনেকে। একসময় ছাত্র রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো অনেকে এখন দেশের প্রধান দলগুলোর নেতৃত্বে। অথচ, সেই ছাত্র সংগঠনগুলোর পদে পদে এখন অস্থিরতা। ভেঙে যাচ্ছে সংগঠন, ফাটল ধরছে নেতৃত্বে। কেউ বলছেন, আচমকা রাজনীতি করতে আসা ব্যবসায়ীদের টাকার দাপটেও টিকতে পারছেন না অনেকে।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ভেঙেছে। তবে অস্থিরতা বেশি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোতেই। ইতোমধ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট দুভাগ থেকে তিনভাগ হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্ব নিয়েও টানাপোড়েন চলছে। ছাত্রলীগের একটি অংশ দীর্ঘদিন পদ না পাওয়ায় হতাশ। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের সভাপতি জয়-লেখককে ব্যর্থ বলছেন তারা। বিভাজন স্পষ্ট ছাত্রদলেও। আবার ছাত্র অধিকার পরিষদের কয়েকজন নেতা কয়েক মাস আগে আরেকটি সংগঠনের নাম ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের সংগঠন কয়েক বছর পার না হতেই নেতৃত্বের বিরোধের জেরে ভেঙে যায়।
নেতা-কর্মীর সংখ্যা কম হলেও দেশের অনেক ইসুতে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোকে বেশি সোচ্চার থাকতে দেখা যেত। কিন্তু দলগুলোতে নেতৃত্ব নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব কাটছেই না। গত ১৬ জানুয়ারি ‘ভাঙা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট আবারও ভাঙে।’
২২ নভেম্বর ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম সম্মেলনে নেতৃত্ব পায় ফয়েজ উল্লাহ ও দীপক শীল। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট এবং ঢাকা মহানগরের সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ইউনিটের নেতারা বর্তমান কমিটির বিরোধিতা করে আবারও সম্মেলন দাবি করে।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংগঠনের কিছু ধারা না মেনে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবলম্বন না করে সম্মেলন হয়। আমরা গত জাতীয় নির্বাচন এবং ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু আমাদের সংগঠনে যদি গণতন্ত্র না থাকে, সংগঠন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা চাই, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পুনরায় সম্মেলন হোক।’
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় ফোরামের সিদ্ধান্ত, এ বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করবো না। বিষয়টি সমাধানের দিকে যাচ্ছে।’
গুরুত্ব পাচ্ছে ব্যবসায়ীরা
ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভাজন এবং অনৈক্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এর বড় কারণ সময়ের অস্থিরতা, যা ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রভাব ফেলছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারও ছাত্র সংগঠনগুলোর বিভাজনকে উৎসাহিত করে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর এক বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যবসায়ীরা। জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচনেও রাজনীতিবিদদের চেয়ে বিত্তশালীরা মনোনয়ন পাচ্ছে বেশি।’
দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা কিংবা শিক্ষার্থীবান্ধব আন্দোলন না থাকাও ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভাজনের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনও মন্তব্যকে ঘিরেও দেখা দিচ্ছে রাগ-ক্ষোভ। এমন অস্থিরতাও তাদের বিভাজনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে ছাত্র সংগঠনগুলো ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দেবে, এটা সহজে বলা যায় না।’
ছাত্রলীগে অসন্তোষ
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করলে পদবঞ্চিতরা কমিটিতে বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করে তারা। এরপর ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিতর্কিত ৩২ নেতাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পার হলেও শূন্যপদ পূরণ করতে পারেননি জয়-লেখক। এ নিয়ে পদপ্রত্যাশীরা হতাশার মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিতর্কমুক্ত ছাত্রলীগ আন্দোলনের মুখপাত্র ও সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জয়-লেখক শূন্যপদ পূরণে লাগাতার মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। তারা শূন্যপদ পূরণে ব্যর্থ। এ নিয়ে আমরা পদপ্রত্যাশীরা চরম অসন্তোষ ও হতাশার মধ্যে আছি।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ফোনে পাওয়া গেলেও সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে পাওয়া যায়নি। তিনি ‘সাংবাদিকদের ফোন ধরেন না’ বলেও জানা গেছে। লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘শূন্যপদ পূরণের কাজ শেষের দিকে। দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা করবো।’
ছাত্রলীগের ঢাবি ইউনিটের বর্তমান কমিটির মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই শেষ হয়। দেড় বছর হয়ে গেলেও হল-কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। এ নিয়ে হল-কমিটির পদপ্রার্থীদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘মেয়াদের বিষয়টি রাজনৈতিক প্রথাগত এবং গঠনতান্ত্রিক বিষয়। ঢাবির ছাত্র রাজনীতির প্রাণ হচ্ছে হল-কমিটি। করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাটা হল-কমিটি না হওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন তারুণ্যদ্বীপ্ত নেতৃত্ব উপহার দিতে পারবো।’
ছাত্রদলে ফাটল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ চলছে বলে জানা যায়। আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সদস্যসচিব আমান উল্লাহ আমানের সঙ্গে ঢাবি কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-আহ্বায়ক আকতার হোসেনের বিরোধ চলছে। গত ২ ডিসেম্বর ঢাবি ছাত্রদলের ঘোষিত একটি কর্মসূচি আলাদাভাবে দুই গ্রুপের নেতৃত্বে পালিত হয়। তখনই বিভাজন প্রকাশ্যে আসে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মেহেদী হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল কবিরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে এসেও আমান উল্লাহ আমান ও আকতার হোসেনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ছাত্রদলের বিভাজন নেই। তবে দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও মতবিরোধ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।’

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন