X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেজর (অব.) হাফিজ কি বিএনপি ছাড়ছেন?

সালমান তারেক শাকিল
১৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:৪৮আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:২৭

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ

দলের দুই ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শো’কজ করে বিএনপি। পল্টন ও গুলিস্তানে হঠাৎ বিএনপির শতাধিক কর্মীর সমাবেশের পর তাদের এই চিঠি দেওয়া হয়। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণেই দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএনপির এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি নিজেই এ বিষয়টি জানিয়েছেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দলের শো’কজের চিঠি তিনি আজ মঙ্গলবার হাতে পেয়েছেন। তিনি চিঠির উত্তর প্রস্তুত করছেন।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি আগামী ১৮ ডিসেম্বর বা তার পর নিজের অবস্থান তুলে ধরবো সংবাদ সম্মেলনে। সেখানেই আমার বক্তব্য আমি দেবো।’ এক্ষেত্রে দল থেকে পদত্যাগ করার বিষয়টি কি সামনে আসবে?—এমন প্রশ্নে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘চিন্তা-ভাবনা করছি। চিঠি একটু আগে পেলাম। চিঠি পড়িনি। চিন্তা-ভাবনা করে জানাবো।’

বিএনপির সূত্রগুলো জানায়, গতকাল সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টন-গুলিস্তান এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ করে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী। ওই বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপি নেতা শওকত মাহমুদ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া। মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি উলফাতও সেখানে ছিলেন, এমন দাবি একাধিক সূত্রের।

সোমবার বিএনপির কর্মীদের সমাবেশ

এছাড়া, সোমবারের বিক্ষোভে ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (কাসেমী) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মুঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ও তার কিছু অনুসারীও অংশ নেন। জমিয়তের একাধিক নেতা জানান, দলের নেতা মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমীর উৎসাহেই মাওলানা আফেন্দী তার অনুসারীদের নিয়ে পুরানা পল্টন এলাকায় অবস্থান করেন।

মাওলানা আফেন্দীর ঘনিষ্ঠ এক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী জানান, ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে সর্বদলীয় প্রোগ্রাম হবে। সেখানে তিনি মাওলানা আফেন্দীকেও থাকার পরামর্শ দেন। যদিও মাওলানা আফেন্দী ঘটনাস্থলে পাঁচ-সাত মিনিট ছিলেন।’ এ বিষয়ে মাওলানা আফেন্দীকে ফোন করা হলে তিনি মন্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, সোমবার পল্টন-গুলিস্তান এলাকার বিক্ষোভের বিষয়টি  হাইকমান্ডের অবগতির বাইরে। একইসঙ্গে এই বিক্ষোভের বিষয়টিও রহস্যজনক বলে মনে করছেন তারা।  দলের হাইকমান্ড তাদের কার্যক্রম পছন্দ করেননি। বিশেষত, বিক্ষোভের সঙ্গে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিষয়ে হাইকমান্ডের নেতিবাচক অবস্থান ছিল। বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করছেন, এমন কয়েকজন নেতাও শীর্ষনেতৃত্বের নজরদারিতে রয়েছেন, এমন দাবি করেছেন কেউ কেউ। সোমবার বিএনপির কর্মীদের সমাবেশ

চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, এক-এগারোর পর থেকে জিয়া পরিবারের মধ্যে সংস্কার-বিষয়ক ভাবনাটি প্রবল হয়। ওই সময়ের বিপর্যয়ের পর থেকে সংস্কার-ধারার সক্রিয় কোনও নেতাকেই দলের গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি কাজে খুব একটা নিযুক্ত করা হয়নি। সেই সংস্কারপন্থীদের মধ্যে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন সামনের কাতারে। আর এ চিন্তাটিও দলের শীর্ষ নেতৃত্বে সব সময়ই কাজ করেছে। যদিও পরবর্তীতে গত কয়েক বছরে দলের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও হাফিজ উদ্দিন এতে আগ্রহ দেখাননি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দলের একটি ক্ষুদ্র অংশ শীর্ষ নেতৃত্বের বাইরে গিয়ে নানা ধরনের ‘বিতর্কিত’ কার্যক্রমে যুক্ত হয়। এ কারণেই আগেভাগে সতর্ক করতেই শোকজ করা হয়েছে দুই সিনিয়র নেতাকে।

স্থায়ী কমিটির একজন প্রবীণ সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক-এগারোর পর থেকে হাফিজ উদ্দিনকে নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের রিজার্ভেশন ছিল। তাকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হতো অনেক আগেই। কিন্তু এক-এগারোর বিষয়টি নিয়ে নেতৃত্বের মাইন্ডসেট হয়ে আছে।’

বিএনপির আরেকটি নির্ভরশীল সূত্রের দাবি, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখন নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির বাইরে কোনও ধরনের হঠকারিতা সৃষ্টি হয়—এমন পথ এড়িয়ে চলবে। সে কারণেই সোমবার বিক্ষোভের নেপথ্যের খোঁজ খবর নিয়ে দুই নেতাকে শোকজ করা হয়।  আগামী দিনে এ ধরনের কার্যক্রমে যেন উৎসাহ তৈরি না হয়, সে পথটি সতর্কতার মাধ্যমে ঠিক করতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। সূত্রের ভাষ্য, সোমবার বিক্ষোভ থেকে যে কোনও স্যাবোটাজ হতে পারতো। এরকম ঘটলে পুরো দায় বিএনপির ওপর আসতো।

সিনিয়র দুই নেতাকে শোকজের প্রভাব দলে কেমন পড়বে, এমন প্রশ্নে দায়িত্বশীল একজন বলেন, ‘প্রভাব তো পড়বে। তবে প্রভাবের বেনিফিট শীর্ষ নেতৃত্ব কীভাবে নেবে, সেটাই বিবেচ্য। বিষয়টি যদি শীর্ষ নেতৃত্ব জেনে-বুঝে করে থাকেন, তাহলে বেনিফিট দলের। আর কোনও পক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করালে তার ফলাফলও ভিন্ন হবে।’

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দল কখন বিক্ষোভ করবে, এটা তো দল ঠিক করবে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয় এ ব্যাপারে। কখন কর্মসূচি দেওয়া হবে, কখন হবে না, এটাও দল ঠিক করে। সেখানে আলাদা করে কয়েকজন মিলে বিক্ষোভের কোনও সুযোগ নেই। আর শোকজের প্রভাব দলে পড়বে না। দল আগের চেয়ে সংগঠিত আছে। তবে শোকজের পর তারা কী করবে, এটা দিন গেলেই স্পষ্ট হবে।’

 

আরও পড়ুন- 

শৃঙ্খলা ভাঙায় হাফিজ উদ্দিন ও শওকত মাহমুদকে শো’কজ: রিজভী

হঠাৎ গুলিস্তান-পল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীরা, পুলিশের ধাওয়া

/এফএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা এজেন্সি মালিকদের
সর্বশেষ খবর
২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ