X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

থানার পাশে পুলিশ সদস্যের বাড়িতেই ছিল ‘জঙ্গি আস্তানা’

আমিনুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ
২১ নভেম্বর ২০২০, ১৮:০৫আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২০, ১৯:১৯

শাহজাদপুরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে এই বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানার খুব কাছে উকিলপাড়া এলাকায় এবং খোদ এক পুলিশ সদস্যের বাড়িতেই নিভৃতে গড়ে ওঠে কথিত জঙ্গি আস্তানাটি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে বৃহত্তর সিরাজগঞ্জ-পাবনা অঞ্চলে সামরিক প্রশিক্ষণ, প্রচার-প্রচারণা বা নাশকতার পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল বাড়িটি। বৃহস্পতিবার চার জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে জানতে পেরে শুক্রবার ভোরে এই আস্তানায় অভিযান চালায় র‌্যাব। কীভাবে পুলিশ ও স্থানীয়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে এখান থেকে জঙ্গিরা সংগঠিত হচ্ছিল, তা নিয়েই এখন চলছে বিশ্লেষণ।

পাঁচ ঘণ্টার অভিযানে ওই বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ জেহাদি বই, দুটি বিদেশি পিস্তল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের কথা জানায় র‌্যাব। অভিযানে চার সন্দেহভাজন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে।

শাহজাদপুর থানার মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে সেই কথিত জঙ্গি আস্তানা। এর পাশেই সদ্য প্রয়াত আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল ও তার স্বজনদের বাড়ি। ব্যাংক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর নির্মাণাধীন একাধিক বাড়িঘরও রয়েছে সেখানে।

জঙ্গি সন্দেহে আটক চার জন

ঢাকার কদমতলীতে কর্মরত কৈজুরী ইউনিয়নের মৃত জনাব আলীর ছেলে পুলিশ সদস্য নুরু ইসলামের পাকা একতলা বাড়িতেই ছিল জঙ্গি আস্তানা। পাশে তার ভায়রা প্রকৌশলী শামসুল হকের আরেকটি একতলা টিনশেড বাড়ি রয়েছে। নুরু পুলিশ বা শামসুল হকের ভায়রা ওষুধ ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন গত ৫ নভেম্বর শিক্ষার্থী পরিচয়ে আসা চার জনকে ভাড়া দেন বাড়িটি। ভাড়াটিয়াদের সঠিক নাম-ঠিকানা বা পরিচয় যাচাই না করেই ভাড়া দেওয়া হয়। থানা পুলিশেও ভাড়াটেদের তথ্য জমা দেওয়া হয়নি। থানার খুব কাছে হলেও গত দুই সপ্তাহে পুলিশের গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে যায় বাড়ির সদস্যদের তৎপরতা।

শনিবার (২১ নভেম্বর) সরেজমিনে গেলে বাড়ির সামনে র‌্যাব সদস্যদের পাহারায় থাকতে দেখা যায়। এলাকাবাসী জানান, জঙ্গিরা নুরু পুলিশের বাড়িতে থাকতো। অপরদিকে, ওষুধ ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, তার ভায়রা প্রকৌশলী শামসুল হকের বাড়িটি গত ৫ নভেম্বর চার জন সুদর্শন যুবক ভাড়া নেয়। জাতীয় পরিচয়পত্র জমা না দিলেও দুই জন অভিভাবক নিয়ে এসে ছাত্র পরিচয়ে তারা ভাড়া নেয়। তাদের দেখে প্রাথমিকভাবে কোনও সন্দেহ তৈরি হয়নি। পরে র‌্যাবের অভিযানে তাদের আটকের খবর জেনে আমরাই হতবাক হয়েছি।

শাহজাদপুরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে র‌্যাবের অভিযান

এদিকে সাবেক আইন সচিবের সহোদর সামিউল হক লাইজু বলেন, ‘বাতির নিচেই অন্ধকার। একবারে পৌরসভার মধ্যে, নুরু পুলিশের বাড়িতে জঙ্গিরা থাকতো। থানার অদূরে, তারপরেও এতদিন পুলিশ বা আমরা কেউ টের পাইনি। হয়তো বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল তাদের। র‌্যাবের অভিযানের পর ঘটনাটি জেনে আমরাও আতঙ্কের মধ্যে পড়েছি। তাদের আর কোনও সদস্য শাহজাদপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কিনা, বা তাদের নতুন কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা, এসব ভেবে ভয়ে ভয়ে আছি।’

শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিদ মাহমুদ খান শনিবার দুপুরে বলেন, ‘অপরিচিত কেউ ভাড়া নেওয়ার আগে পুলিশ সদর দফতরের পাঠানো একটি ফরম ভাড়াটের কাছ থেকে পূরণ করিয়ে নিতে হবে। বাড়িওয়ালাদের এই ফরম সরবরাহ করা আছে। করোনার কারণে এটি কড়াকড়িভাবে আদায় করা সম্ভব হয়নি। জঙ্গিরা নতুন আস্তানা গড়ে তোলায় এটি আসলে পুলিশের নজরদারির বাইরে ছিল।’ তিনি আরও জানান, ‘আটক চার জঙ্গি সদস্যকে এখনও থানায় সোপর্দ করা হয়নি। সোপর্দ করা হলেই আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলা কারাগারে পাঠানো হবে।’ 

শাহজাদপুরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে র‌্যাবের অভিযান

এদিকে, শুক্রবার র‌্যাবের অভিযানে আটককৃতরা হলেন, জেএমবি সংগঠনের শীর্ষ সক্রিয় সদস্য পাবনার সাথিয়া উপজেলার দাড়ামুধা গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে শামীম হোসেন ওরফে কিরণ (১৯), একই এলাকার আবু তালেবের ছেলে নাইমুল ইসলাম (২৫), দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার শশরাসাহাপাড়া গ্রামের মানিক হোসেনের ছেলে আতিউর রহমান (১৯) ও সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার দক্ষিণ নলতা গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে আমিনুল ইসলাম শান্ত (২০)।

অভিযান শেষে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার সাংবাদিকদের জানান, শামীম হোসেন কিরণ রাজশাহী জেএমবির আঞ্চলিক কামান্ডার মাহমুদের সেকেন্ড ইন কমান্ড এবং পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের আঞ্চলিক নেতা। তারা জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে জেএমবি কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে সংগঠন পরিচালনায় চাঁদা সংগ্রহ করতো বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। পরিচয় গোপন করে তাবলিগ জামায়েতের ছদ্মবেশে এসব প্রচার ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতো তারা।

র‌্যাবের উদ্ধার করা সরঞ্জাম

তিনি আরও জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী শাহ মখদুম এলাকা থেকে জেএমবির উত্তরাঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার মাহমুদসহ চার জনকে গ্রেফতার হয়। তাদের তথ্য মতে শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে শাহজাদপুরে ওই বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার অভিযান শেষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই চার জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে। পরে র‌্যাবের বোম ডিজপোজাল দল ঢুকে দুটি পিস্তল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। এখানে পিস্তল, কিছু বিস্ফোরক ছাড়া ভারী অস্ত্র ছিল না। বোমা তৈরি ও জিহাদি প্রশিক্ষণের কিছু বই পাওয়া যায়।

এই কর্মকর্তা আরও জানান, শাহজাদপুরের ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে তাবলিগ জামায়াতের ছদ্মবেশে এরা প্রচারণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতো। জেএমবির জিহাদিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিয়ে আসা হতো। এখানে আরও কিছু জঙ্গি আসার কথা ছিল। নেতৃস্থানীয় একজনের কারণেই তারা আসেনি। তারা একটি বাসায় এক মাস বা দুই মাসের বেশি থাকতো না। তাদের পরিকল্পনা ছিল এখানে থেকে তাবলিগে বেশে দাওয়াত কার্যক্রম, চাঁদা আদায় ও প্রশিক্ষণ পরিচালনা।

আরও পড়ুন- 

জঙ্গি আস্তানায় মিলেছে জিহাদি বই, পিস্তল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম

শাহজাদপুরে ‘জঙ্গি আস্তানা’, চার জনের আত্মসমর্পণ

/এফএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!